- -যেভাবে স্বাগত জানাব মাহে রমজানকে-আব্দুর রহমান বিন আব্দুল আযীয আস-সুদাইস
- -রোযার ৭০টি মাসয়ালা- মাসায়েল-শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
- -ফিকহুস সিয়ামঃ সিয়ামের বিধান ও মাসায়েল-সংকলনঃ মুহাম্মদ নাসীল শাহরুখ
- -ঋতুবতী নারীর রোজা ত্যাগ ও কাজা প্রসঙ্গ-আলী হাসান তৈয়ব
- -প্রশ্নোত্তরে সিয়াম-অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলাম
- -রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন-ফয়সাল বিন আলী আল বা‘দানী
- -রমজান বিষয়ক ফতোয়া-আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
- -রোযাদারের ভুল-ত্রুটি-শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন
- -এতেকাফ: তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও বিধান-আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
- -এতেকাফের বিধান ও শর্ত-জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
- -রমজান ও পরবর্তী সময়ে করণীয়-সংকলনঃ আবুল কালাম আজাদ
Friday, 19 June 2015
সাওম/রোজা সংক্রান্ত বই
Wednesday, 17 June 2015
রমজানের গান শুনুন
সেহরী খাবার সময় হলো
রমজানের পবিত্রতা করি সংরক্ষন
একটি বছর পরে আবার ফিরে এলো মাহে রমজান
সিয়াম এর শিক্ষা নিয়ে ত্যাগের পথে চলা
ঐ শোনা যায়
নাযাতের বাণী নিয়ে এলোরে রমজান
Rahmat barakat magfirater ei mahe Ramadan
বাঁকা চাঁদের নাও
প্রশিক্ষনের মাস এই যে মাহে রমজান
নীল আকাশের নীলের খামে
মাহে রমজান এলো বছর ঘুরে
জান্নাতের ই দুয়ার খুলে দিলেন মেহেরবান
তোমায় স্বাগত হে মাহে রমজান
Ramadan El Sana Di
আহলান সাহলান মারহাবান ইয়া রামাদান
রহম ঝরা সিয়াম এসে
Kutiba Alaikumus Siam
Khoda Tomar Voye Kaape
হাজার মাসের চাইতে যে রাত
Ore mumin musolman
জনপ্রিয় হামদ, নাত, নজরুল সঙ্গীত, দেশের গান, রমজানের গান, ঈদের গান, আন্দোলনের গান শুনতে ভিজিট করুন --
রমজানের পবিত্রতা করি সংরক্ষন
একটি বছর পরে আবার ফিরে এলো মাহে রমজান
সিয়াম এর শিক্ষা নিয়ে ত্যাগের পথে চলা
ঐ শোনা যায়
নাযাতের বাণী নিয়ে এলোরে রমজান
Rahmat barakat magfirater ei mahe Ramadan
বাঁকা চাঁদের নাও
প্রশিক্ষনের মাস এই যে মাহে রমজান
নীল আকাশের নীলের খামে
মাহে রমজান এলো বছর ঘুরে
জান্নাতের ই দুয়ার খুলে দিলেন মেহেরবান
তোমায় স্বাগত হে মাহে রমজান
Ramadan El Sana Di
আহলান সাহলান মারহাবান ইয়া রামাদান
রহম ঝরা সিয়াম এসে
Kutiba Alaikumus Siam
Khoda Tomar Voye Kaape
হাজার মাসের চাইতে যে রাত
Ore mumin musolman
জনপ্রিয় হামদ, নাত, নজরুল সঙ্গীত, দেশের গান, রমজানের গান, ঈদের গান, আন্দোলনের গান শুনতে ভিজিট করুন --
Wednesday, 10 June 2015
আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে যাই
মাত্র ০৪ বছরের রিয়াদ, মা বাবার একমাত্র আদরের সন্তান । বাবা কুলি আর মা
বিভিন্ন বাসায় রান্না বান্না করেন । মায়ের সাথেই রিয়াদ থাকে । বাচ্চা ছেলে
রিয়াদ । অন্যান্য বাচ্চাদের মতো তারও খেলতে ইচ্ছে করে । কিন্তু তার কোন
খেলার সঙ্গী নেই । রিয়াদ তার মায়ের সাথে এক বাসায় নিয়মিত ০৩ বার রান্না
করতে যায় । আর সেই বাসায় যারা থাকেন তারা অনেক ভাল মানুষ । রিয়াদকে তারা
অনেক স্নেহ করে । সে অনেক দুষ্ট প্রকৃতির বলে সারাক্ষণ দুষ্টামির মধ্যে দিন
কাটায় । বাসার মধ্যে ০৬ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকে । তাদের সাথেই
রিয়াদ দুষ্টামি করে । একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র বাসার মধ্যে
জামায়াতে নামাজ আদায় করার জন্য দাঁড়ালে রিয়াদ ও তাদের প্বাশে এসে দাড়ায়
নামায আদায় করার জন্য । আর এই দৃশ্য দূর থেকে তার মা দেখে বলেই উঠলো,
মাশাআল্লাহ ! আমার রিয়াদ ও মামাদের সাথে নামায পড়ছে
আমাদের যত অজুহাত যত উসিলা সব আল্লাহর নির্দেশ মানতে।
কাউকে কখনো শুনিনি যে ঘুমের জন্য পরীক্ষা দিতে পারেনি বলতে বরং শুনেছি
ঘুমের জন্য সালাত কাযা যেতে। কখনো দেখিনি পরীক্ষার আগের রাতে বেহুদা
খেলাধুলা, গানবাজনায় মত্ত হতে, দেখেছি দুনিয়ার এই পরীক্ষাক্ষেত্রে এই সব
নিয়ে মত্ত হতে। কখনো কেউ বলেনি ভালো না লাগার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে,
বলেছে ভালো লাগেনা বলে কুরআন না পড়ে থেকেছে।
সামাজিক নিয়মের বেড়াজালেই আবদ্ধ আমরা তবুও নিজেদের ভালোর জন্য, পরকালের শান্তির জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্রষ্টার দেয়া নিয়ম মানতেই যত আপত্তি আমাদের। কবে হুশ হবে আমাদের?? কবে??
সামাজিক নিয়মের বেড়াজালেই আবদ্ধ আমরা তবুও নিজেদের ভালোর জন্য, পরকালের শান্তির জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্রষ্টার দেয়া নিয়ম মানতেই যত আপত্তি আমাদের। কবে হুশ হবে আমাদের?? কবে??
মন শান্ত হয়ে গেলো এই গল্পটা পড়ে।
একদিন এক শিক্ষক তার ছাত্রদের প্রশ্ন করলেন- “তোমরা কি বলতে পারো, আমরা যখন অনেক বেশি রেগে যাই, তখন চিৎকার করি কেন?”
সবাই বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর একজন ছাত্র উত্তর দিলো-” কারণ
রেগে গেলে আমরা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাই তাই
একটা পর্যায়ে চিৎকার করে ফেলি।” “কিন্তু আমরা যার উপর রাগ করি সেই মানুষটি তো আমাদের সামনেই থাকে তবুও কেন আমাদের
কে চেঁচিয়ে তার সাথে কথা বলতে হবে? নরম স্বরে,
আস্তে কথা বললেও তো সে শুনতে পাবে। তাই না?”
ছাত্ররা অনেক চিন্তা করেও শিক্ষকের এই প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর
খুঁজে পেলো না। তখন শিক্ষক ব্যাখা করলেন- “দুটো মানুষ যখন
একে অপরের উপর রেগে যায় তখন তারা একে অন্যের অন্তর
থেকে দূরে সরে যায়। এই রাগ তাদের অন্তরের মাঝেও দুরত্ব সৃষ্টি করে। সেই দুরত্ব একটু একটু করে যত বাড়তে থাকে ততই তাদের রাগ বা ক্রোধ বেড়ে যায়
এবং তখন তাদেরকে আরও চিৎকার করতে হয়, আরও জোরে তর্ক করতে হয়।” “আবার যদি আমরা ভেবে দেখি, দুজন মানুষ যখন একে অন্যের
প্রেমে পড়ে বা ভালোবাসে তখন কী হয়? তখন ভালোবাসার
বন্ধনে থাকা মানুষ দুজন একে অন্যের সাথে ধীরে ধীরে নরম স্বরে, আবেগ
নিয়ে কথা বলে। কারণ যারা ভালোবাসে তারা একে অন্যের
অন্তরের খুব কাছে থাকে। আর যারা অন্তরের কাছে থাকে তাদের
কথা শুনতে হলে চিৎকার করার কোন প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি শুধুমাত্র ফিস্ ফিস্ করেও তারা তখন কথা বলতে পারে।”
“যারা আরও বেশি গভীরভাবে একে অন্যকে অনুভব
করতে পারে, ভালোবাসতে পারে তখন কী হয় তা কি আমরা জানি?”
“অদ্ভুত সুন্দর ব্যাপার হলো, তাদের তখন ফিস্ ফিস্ করেও কথা বলতে হয় না। তারা দুজন যখন একে অন্যের চোখের দিকে তাকায় তখনই অন্তরের অনুভূতি,
কথা, শব্দমালা সব অনুভব করে ফেলতে পারে। কারণ তখন তাদের
অন্তর তাদের কে এক করে ফেলে। তাদের কথা হয় তখন অন্তরে অন্তরে।”
(ব্রাজিলের বিখ্যাত এবং বেস্টসেলার লেখক *পাওলো কোয়েলহো* ঠিক এমন করে লিখেছেন তার “30 SEC READING: why do we shout in anger?” গল্পে। যিনি বিশ্বাস করেন “প্রত্যেকটা মানুষই এক একটা জাদুকর”। কী অদ্ভুত সুন্দর আর ইতিবাচক উনার ভাবনা,গল্প এবং বিশ্বাস।
সবাই বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর একজন ছাত্র উত্তর দিলো-” কারণ
রেগে গেলে আমরা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাই তাই
একটা পর্যায়ে চিৎকার করে ফেলি।” “কিন্তু আমরা যার উপর রাগ করি সেই মানুষটি তো আমাদের সামনেই থাকে তবুও কেন আমাদের
কে চেঁচিয়ে তার সাথে কথা বলতে হবে? নরম স্বরে,
আস্তে কথা বললেও তো সে শুনতে পাবে। তাই না?”
ছাত্ররা অনেক চিন্তা করেও শিক্ষকের এই প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর
খুঁজে পেলো না। তখন শিক্ষক ব্যাখা করলেন- “দুটো মানুষ যখন
একে অপরের উপর রেগে যায় তখন তারা একে অন্যের অন্তর
থেকে দূরে সরে যায়। এই রাগ তাদের অন্তরের মাঝেও দুরত্ব সৃষ্টি করে। সেই দুরত্ব একটু একটু করে যত বাড়তে থাকে ততই তাদের রাগ বা ক্রোধ বেড়ে যায়
এবং তখন তাদেরকে আরও চিৎকার করতে হয়, আরও জোরে তর্ক করতে হয়।” “আবার যদি আমরা ভেবে দেখি, দুজন মানুষ যখন একে অন্যের
প্রেমে পড়ে বা ভালোবাসে তখন কী হয়? তখন ভালোবাসার
বন্ধনে থাকা মানুষ দুজন একে অন্যের সাথে ধীরে ধীরে নরম স্বরে, আবেগ
নিয়ে কথা বলে। কারণ যারা ভালোবাসে তারা একে অন্যের
অন্তরের খুব কাছে থাকে। আর যারা অন্তরের কাছে থাকে তাদের
কথা শুনতে হলে চিৎকার করার কোন প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি শুধুমাত্র ফিস্ ফিস্ করেও তারা তখন কথা বলতে পারে।”
“যারা আরও বেশি গভীরভাবে একে অন্যকে অনুভব
করতে পারে, ভালোবাসতে পারে তখন কী হয় তা কি আমরা জানি?”
“অদ্ভুত সুন্দর ব্যাপার হলো, তাদের তখন ফিস্ ফিস্ করেও কথা বলতে হয় না। তারা দুজন যখন একে অন্যের চোখের দিকে তাকায় তখনই অন্তরের অনুভূতি,
কথা, শব্দমালা সব অনুভব করে ফেলতে পারে। কারণ তখন তাদের
অন্তর তাদের কে এক করে ফেলে। তাদের কথা হয় তখন অন্তরে অন্তরে।”
(ব্রাজিলের বিখ্যাত এবং বেস্টসেলার লেখক *পাওলো কোয়েলহো* ঠিক এমন করে লিখেছেন তার “30 SEC READING: why do we shout in anger?” গল্পে। যিনি বিশ্বাস করেন “প্রত্যেকটা মানুষই এক একটা জাদুকর”। কী অদ্ভুত সুন্দর আর ইতিবাচক উনার ভাবনা,গল্প এবং বিশ্বাস।
মনে রাখবেন,আপনিও একদিন বৃদ্ধ হবেন
স্ত্রীঃ আজকে তোমাকে আমার কিছু প্রশ্নের উওর দিতে হবে। স্বামীঃ বল?
স্ত্রীঃ তুমি তোমার বৃদ্ধা মা বাবাকে নিয়ে এত ভাবো কেন? আমাদের কি কোন
ভবিষ্যত নেই? আমাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোন চিন্তা করো ? স্বামীঃ আমি ঘরের
বড় ছেলে। আমার বেশ অনেক দায়িত্ব আছে। তাছাড়া বাবা মা আমাকে অনেক কষ্টে
মানুষ করেছে আমি তাদের নিয়ে না ভাবলে কে ভাববে?? স্ত্রীঃ কেন! তোমার তো
আরো ভাই আছে,তারা দেখবে। স্বামীঃ তাদের স্ত্রীরাও যদি এমন বলে তখন আমার
বৃদ্ধা মা বাবাকে কে দেখবে?? স্ত্রীঃ আমি অত কিছু জানি না। আমি আর পারবো
না। আর তোমাকেও দিবনা তাদের পেছনে এত টাকা খরচ করতে!!স্বামীঃ আজ থেকে আমি
আমার মায়ের পায়ের নিচে ঘুমাবো। তোমার পাশে ঘুমানোর চেয়ে মায়ের পায়ের
নিচে ঘুমানো হাজার গুন শান্তি। স্ত্রীঃ (রাগানিত্ব হয়ে!) আজ বুঝলাম তুমি
আমাকে একটুও ভালোবাসো না!! তোমার সাথে আর সংসার করা যাবে না!! শেষ একটা
প্রশ্নের উওর দাও। তুমি আমাকে নাকি তোমার মাকে বেশি ভালোবাসো?? স্বামীঃ
দুজনকেই আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি। স্ত্রীঃ কাকে বেশি? ধর আমি আর
তোমার মা একটা বিপদে পড়েছি! শুধু একজনকে বাঁচাতে পারবে তুমি!কাকে বাঁচাবে??
স্বামীঃ আমার মাকে বাঁচিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার সাথে মরে যাবো।
স্ত্রীঃ তার ভুল বুঝতে পেরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। স্বামীঃ এবার আমি তোমাকে
কিছু কথা বলব মনোযোগ দিয়ে শুনো। ধর আমি আর তুমি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে
আমাদের ছেলেদের মানুষ করলাম। তারা বড় হয়ে গেল।বিয়ে করল। আমরা দুজনও বৃদ্ধ
হয়ে গেলাম। তখন আমাদের ছেলেদের স্ত্রী এসে যদি তোমার মত একই কথা বলে,
ছেলেরা ও যদি তাদের স্ত্রীর কথা শুনে তোমার দেখাশোনা না করে বৃদ্ধাশ্রমে
দিয়ে আসে তখন তোমার কতটা কষ্ট লাগবে? স্ত্রীঃ ওগো আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমি
যে একজন মা। আমাকে যে একদিন বৃদ্ধহতে হবে। আমি সেই কথা ভুলেই গেছি। আমি আজ
থেকে তোমার মাকে নিজের মা, এবং আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসবো।
মন্তব্যঃ মেয়েদের বলছি, আপনি যে একজনের স্ত্রী হয়ে এসে বলেন তার মা-বাবা
কে ভুলে যেতে!আপনার ভাইয়েরও কিন্তু স্ত্রী আসবে, তারা যদি এসে আপনার
ভাইদের বলে আপনার মা-বাবাকে ভুলে যেতে তখন আপনার কেমন লাগবে?? মনে
রাখবেন,আপনিও একদিন বৃদ্ধ হবেন
…সংগৃহীত ও পরিমার্জিত
…সংগৃহীত ও পরিমার্জিত
অনেক কষ্টে ছেলে আজ মানুষ হয়েছেঃ
খালেদো বেগমের ছেলে মামুন আজ মানুষ হয়েছে । তবে এর পিছনে কষ্ট করতে হয়েছে
অনেক । একমাত্র মায়ের স্নেহ, ভালবাসা আর উৎসাহ উদ্দীপনা পেয়ে আজ মামুন অনেক
বড় । গ্রামের সরকারী প্রাইমারী স্কুল হতে ৫ম শ্রেণী পাশ করার পর,
বাবা-মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী মামুন একটি ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয় । যখন মামুন
নবম শ্রেণীতে তখন তার অভিভাবক বাবা ইন্তেকাল করেন । পাচঁ ভাই তিন বোনের
মধ্যে মামুন সবার ছোট । তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর সবার ছোট বলে যেভাবে
স্নেহ, ভালবাসা ও সহযোগিতা পেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু
মামুনের ভাগ্যে তা হলো না । বাবা নেই এ কথাটা সে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ।
সামনে দাখিল পরীক্ষা থাকা সত্বেও পড়ালেখায় উদাসীন হয়ে যায় সে । তারপরেও
দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে পাশ করে মামুন । বাবা মারা যাওয়ার পর এক এক
করে সকল বোনদের বিবাহ হয়ে যায় । বোনেরা স্বামীর বাড়ীতে থাকে । তারপর মামুন
ছাড়া সকল ভাইয়েরা বিবাহ করে আলাদা হয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে । এদিকে মামুন
তার মা কে নিয়ে বাড়ীতে থাকে । বোনেরা কিছু খোজখবর রাখলেও ভাইয়েরা তেমন
খোজখবর রাখেনা । মা সকল কষ্ট, দুঃখ, ব্যাথা, বেদনা বুকের ভিতর চাপা দিয়ে
আছেন । কাউকে তিনি কষ্টের কথা বলেন না । নিরবে কেদেঁ কেদেঁ বুক ভাসান ।
মামুন প্রায় ভাইদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও তারা করেনা । অনেক দুঃখ নিয়ে
মামুন ভাবতে থাকে কি করা যায় ? কিন্ত মা বললেন, বাবা ! আমিতে এখনো বেচেঁ
আছি । অবশেষে মামুনের মায়ের স্নেহ, ভালবাসা আর উৎসাহ, উদ্দীপনা পেয়ে
মাদ্রাসা হতে আলিম, ফাজিল, কামিল, এবং বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্স, মাস্টার্স
শেষ করে । বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ ও তাঁর মায়ের কিছু উপার্জন দিয়ে সামনের
দিকে এগিয়ে চলে । মামুন তার মাকে নিয়েই বাড়ীতে থাকে এবং মা ছাড়া সে কিছুই
বুঝেনা । সে চাকরী করে মায়ের পিছনেই খরচ করে । মা তার জন্য সবসময় দোয়া করেন
। আজ মামুনের সকল উপার্জন মায়ের দোয়ার ফসল । আর এখন মা গর্ব করে বলছে ছেলে
আমার মানুষ হয়েছে
পুরুষের সফলতার পিছে রয়েছে একজন মহৎ নারী
‘প্রতিটি মহান পুরুষের সফলতার পিছে রয়েছে একজন মহৎ নারী। অনেকেই এ
প্রবাদের পক্ষে এবং অনেকেই এর বিপক্ষে। তবে আমাদের সকলেরই একথা স্বীকার
করতে হবে যে একজন স্বামীর জীবনে তার স্ত্রীর গুরুত্ব অনেক; আর তাদের
দায়িত্ব যদি তারা ঠিক মত পালন করে তবেই ইসলাম প্রচার আরও সুষ্ঠ ও সফলতার
সাথে হবে। একারণেই আমাদের রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) একাধিক স্থানে নারীদের
গুরুত্বের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন, তিনি মুসলিম পুরুষদেরকে বিবাহের জন্য
দ্বীনি মহিলাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রতি উৎসাহিত করেছেন;
যে তার স্বামী, গৃহ ও তার সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহকে অধিক ভয় করে।
আর নারী চাইলে অনেক কিছু পারে,মহান আল্লাহ পাক সেই ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন তাদের, আদর্শ সন্তান গড়ে তুলে সমাজ জাতি দেশ বদলে দিতে পারে, সমগ্র বিশ্বে বিপ্লবের জোয়ার বইয়ে দিতে পারে।
কিন্তু হায়! টিভি সিরিয়াল আর গল্পের আসরে এত ব্যস্ত তারা, সন্তান কে দেবার মত সময় কোথায়?
আর নারী চাইলে অনেক কিছু পারে,মহান আল্লাহ পাক সেই ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন তাদের, আদর্শ সন্তান গড়ে তুলে সমাজ জাতি দেশ বদলে দিতে পারে, সমগ্র বিশ্বে বিপ্লবের জোয়ার বইয়ে দিতে পারে।
কিন্তু হায়! টিভি সিরিয়াল আর গল্পের আসরে এত ব্যস্ত তারা, সন্তান কে দেবার মত সময় কোথায়?
বাণী
মানুষের মনের মধ্যে এমন ভাবে নিজের জন্য জায়গা করে নাও
যেন তুমি মরে গেলে তোমার জন্য তারা দোয়া করে
আর বেঁচে থাকলে তোমাকে ভালবাসে।
-হযরত আলী (রা:)
যেন তুমি মরে গেলে তোমার জন্য তারা দোয়া করে
আর বেঁচে থাকলে তোমাকে ভালবাসে।
-হযরত আলী (রা:)
নামায বহু কিছু শেখায়ঃ
১. যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে আদায় করে
নামায তাকে সারাক্ষণ আল্লাহর কথা স্মরণ করায় । সর্বদা নামাযের সময় সম্পর্কে
তাকে সচেতন থাকতে হয় । সে যে একমাত্র আল্লাহর দাস নামায তাকে সে কথা ভুলতে
দেয়না।
আল্লাহ বলেন : আমাকে মনে রাখার উদ্দেশ্যে নামায কায়েম কর।
২. যে মন-মানসিকতা ও জযবা নিয়ে নামায আদায় করতে হয় নামাযের বাইরের তৎপরতার সময়ও ঐ মন মানসিকতা ও জযবার প্রভাব জারী থাকে।
৩. নামায কড়াভাবে সময়ানুবর্তিতা শেখায় । বারবার যথাসময়ে নামাযের জামায়াতে হাযির হওয়ার ফলে সব কাজই সময় মতো করার অভ্যাস হয়।
৪. ঠিক মতো অযু করা, মসজিদে হাযির হওয়া, ইমামের আনুগত্য করা, ঠিক ঠিক মতো নামায আদায় করা ইত্যাদি নামাযীর জীবনে শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি করে । সব কাজ গোছালোভাবে করার মানসিকতা গড়ে উঠে।
৫. নামায সামাজিক ও রাষ্টীয় জীবনে নিয়ম নীতি মেনে চলার প্রশিক্ষণ দেয়। ইমামের আনুগত্যের মাধ্যমে নেতার আনুগত্যের ট্রেনিং হয়। ইমাম ভুল করলে শালীন ভাষায় লুকমা দিয়ে ইমামকে সংশোধন করার মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করার ভদ্র-পদ্ধতির শিক্ষা লাভ হয়। নামায রাজনৈতিক ময়দানেও সুশৃঙ্খল ও শালীন হতে উদ্বুদ্ধ করে।
আল্লাহ বলেন : আমাকে মনে রাখার উদ্দেশ্যে নামায কায়েম কর।
২. যে মন-মানসিকতা ও জযবা নিয়ে নামায আদায় করতে হয় নামাযের বাইরের তৎপরতার সময়ও ঐ মন মানসিকতা ও জযবার প্রভাব জারী থাকে।
৩. নামায কড়াভাবে সময়ানুবর্তিতা শেখায় । বারবার যথাসময়ে নামাযের জামায়াতে হাযির হওয়ার ফলে সব কাজই সময় মতো করার অভ্যাস হয়।
৪. ঠিক মতো অযু করা, মসজিদে হাযির হওয়া, ইমামের আনুগত্য করা, ঠিক ঠিক মতো নামায আদায় করা ইত্যাদি নামাযীর জীবনে শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি করে । সব কাজ গোছালোভাবে করার মানসিকতা গড়ে উঠে।
৫. নামায সামাজিক ও রাষ্টীয় জীবনে নিয়ম নীতি মেনে চলার প্রশিক্ষণ দেয়। ইমামের আনুগত্যের মাধ্যমে নেতার আনুগত্যের ট্রেনিং হয়। ইমাম ভুল করলে শালীন ভাষায় লুকমা দিয়ে ইমামকে সংশোধন করার মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করার ভদ্র-পদ্ধতির শিক্ষা লাভ হয়। নামায রাজনৈতিক ময়দানেও সুশৃঙ্খল ও শালীন হতে উদ্বুদ্ধ করে।
Sunday, 7 June 2015
হে আল্লাহ ! আমাদের গুনাহ্ ক্ষমা করো
ইবলিশ, যে ২৪ ঘন্টা আপনার পিছনে লেগে থাকে। আপনার উপর নজরদারী করে,
সজাগ দৃষ্টি মেলে অবলোকন করে আপনার দ্বারা কোনো নেক কাজ হচ্ছে নাতো? আপনি
কোনো ভালো কাজ করে ফেললেন না তো? এরপর আপনাকে গুনাহের দিকে নেওয়ার চেষ্টা
করে। কারো উপর সফল হয় আবার কারো উপর হয় না।
আপনার দ্বারা যদি গুনাহ্ হয়েই যায়; তা ছোট হোক বা বড়; গুনাহ্ থেকে পরিশুদ্ধ হওয়ার পথ আল্লাহ্ তা’আলা খুলে রেখেছেন তাঁর গুনাহগার বান্দার জন্য। আর তা হলো তওবা। তওবা ব্যতিত গুনাহ্ থেকে আত্মপরিশুদ্ধী লাভ করা অসম্ভব।
আল্লহু সুব’হানু ওয়া তা’আলা অসীম দয়াময়, অতি ক্ষমাশীল। তিনি তাঁর বান্দার খাঁদহীন তওবা কবুল করে নেন।
আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন যেঃ *অবশ্য যারা তওবা করে, সংশোধন হয়, আর আল্লাহ্-কে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে, দ্বীনকে আল্লাহর জন্য খাঁটি করে, এরাই মুমিনদের সাথে আছে। আর আল্লাহ্ শীঘ্রই মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার প্রদান করবেন।
[ ৪:১৪৬ ]
তবে দেরি কেনো? আজ এখন এই মুহূর্তেই মুখ ফিরিয়ে নিন গুনাহের পথ থেকে আর ওয়াদা করুন ওপথে না তাকানোর এবং হাঁটুন দ্বীনের পথে দৃঢ়তার সাথে। আমাদের রব অতি করুণাময়, তিনি তাঁর বান্দা/বান্দীদেরকে অনেক ভালোবাসেন।
হে আল্লাহ ! আমাদের গুনাহ্ ক্ষমা করো। (আমীন)
আপনার দ্বারা যদি গুনাহ্ হয়েই যায়; তা ছোট হোক বা বড়; গুনাহ্ থেকে পরিশুদ্ধ হওয়ার পথ আল্লাহ্ তা’আলা খুলে রেখেছেন তাঁর গুনাহগার বান্দার জন্য। আর তা হলো তওবা। তওবা ব্যতিত গুনাহ্ থেকে আত্মপরিশুদ্ধী লাভ করা অসম্ভব।
আল্লহু সুব’হানু ওয়া তা’আলা অসীম দয়াময়, অতি ক্ষমাশীল। তিনি তাঁর বান্দার খাঁদহীন তওবা কবুল করে নেন।
আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন যেঃ *অবশ্য যারা তওবা করে, সংশোধন হয়, আর আল্লাহ্-কে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে, দ্বীনকে আল্লাহর জন্য খাঁটি করে, এরাই মুমিনদের সাথে আছে। আর আল্লাহ্ শীঘ্রই মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার প্রদান করবেন।
[ ৪:১৪৬ ]
তবে দেরি কেনো? আজ এখন এই মুহূর্তেই মুখ ফিরিয়ে নিন গুনাহের পথ থেকে আর ওয়াদা করুন ওপথে না তাকানোর এবং হাঁটুন দ্বীনের পথে দৃঢ়তার সাথে। আমাদের রব অতি করুণাময়, তিনি তাঁর বান্দা/বান্দীদেরকে অনেক ভালোবাসেন।
হে আল্লাহ ! আমাদের গুনাহ্ ক্ষমা করো। (আমীন)
প্রিয়তমা
‘মৃত্যু’,তোমায় আদর করে কি নামে ডাকব আমি?
তোমার নামটি উচ্চারনে কেন এতো ভয় জাগে বুকে! তোমায় দেখলে কেনইবা সকলে পালাতে চায়। তবেকি তুমি নিদারুন তোমার কি কোনই সৌন্দর্য নেই। তুমি কি কেবলি কুৎসিত! নাকি তুমি শুধুই মৃত্যু যার কোন বর্ননা নেই। তোমাকে দেখে ভয়ে দৌড়ে পালাব নাকি তোমায় গলায় জড়িয়ে ধরব! খুব বেশি মনে পড়ে সেই সব শহীদদের কথা যারা মৃত্যুকে দেখে বলেছে বাহ, তুমি কতো সুন্দর! আর যারা মৃত্যুকে ভালোবেসে যার নাম দিয়েছে প্রিয়তমা
তোমার নামটি উচ্চারনে কেন এতো ভয় জাগে বুকে! তোমায় দেখলে কেনইবা সকলে পালাতে চায়। তবেকি তুমি নিদারুন তোমার কি কোনই সৌন্দর্য নেই। তুমি কি কেবলি কুৎসিত! নাকি তুমি শুধুই মৃত্যু যার কোন বর্ননা নেই। তোমাকে দেখে ভয়ে দৌড়ে পালাব নাকি তোমায় গলায় জড়িয়ে ধরব! খুব বেশি মনে পড়ে সেই সব শহীদদের কথা যারা মৃত্যুকে দেখে বলেছে বাহ, তুমি কতো সুন্দর! আর যারা মৃত্যুকে ভালোবেসে যার নাম দিয়েছে প্রিয়তমা
গর্তে পড়ে যাওয়া এক গাধার গল্প
একটু কষ্ট হলেও পড়ে দেখুন, ভাল কিছু জানতে পারবেন
একদিন এক কৃষকের গাধা একটা গর্তে পড়ে গেল। প্রানীটি কয়েক ঘণ্টা ধরে চিৎকার করতে লাগল এবং তাঁর মালিকও চিন্তা করল তাকে কি করা যায়। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন গাধাটির অনেক বয়স হয়েছে, তাই এটা মোটেই খারাপ হবে না যদি তাকে মাটি দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে মেরে ফেলা হয়। তিনি তার প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণ জানালো তাকে সাহায্য করার জন্য। তারা সবাই একটি করে বেলচা নিল এবং ওই
গর্তে মাটি ফেলতে লাগলো।
প্রথমে গাধাটি বুঝল যে তাকে ভয়ঙ্করভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে গাধাটি আরও বেশী চিৎকার করতে লাগলো। গর্তে কিছু মাটি ফেলার পর, কৃষক শেষ বারের মতো গর্তের দিকে দেখল, তিনি বিস্মিত হয়ে গেল গর্তে যা দেখল। গর্তে যত বার বেলচা থেকে মাটি পরতে লাগলো, গাধাটা তা দেহ থেকে মাটি গুলো ঝেড়ে সে ঐ মাটির উপর তার পা গুলো রাখতে লাগলো। কৃষকের প্রতিবেশীরা অবিরাম ভাবে বেলচা দিয়ে মাটি ফেলতে লাগলো এবং প্রানীটি একইভাবে তার দেহ থেকে মাটি গুলো ঝেড়ে সে ঐ মাটির উপর তার পা গুলো রাখতে লাগলো। একসময় দেখা গেল গাধাটা ঠিক গর্তের উপরে উঠে আসল এবং তার জীবনটা ফিরে পেল।
এই গাধাটার মতই প্রতিনিয়ত ময়লা এসে আমাদের জীবনে পরছে। জীবনকে যদি সুন্দর করতে চান ঐ ময়লা গুলো জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলে উপরের দিকে যান।
জীবনের প্রতিটি সমস্যা এক একটি মাটি ভরা বেলচার মতো, আমরা সমস্যার চাপে হারিয়ে যেতে পারি যদি না সেগুলো ঠেলে তার উপর দাঁড়াতে না পারি।
একদিন এক কৃষকের গাধা একটা গর্তে পড়ে গেল। প্রানীটি কয়েক ঘণ্টা ধরে চিৎকার করতে লাগল এবং তাঁর মালিকও চিন্তা করল তাকে কি করা যায়। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন গাধাটির অনেক বয়স হয়েছে, তাই এটা মোটেই খারাপ হবে না যদি তাকে মাটি দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে মেরে ফেলা হয়। তিনি তার প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণ জানালো তাকে সাহায্য করার জন্য। তারা সবাই একটি করে বেলচা নিল এবং ওই
গর্তে মাটি ফেলতে লাগলো।
প্রথমে গাধাটি বুঝল যে তাকে ভয়ঙ্করভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে গাধাটি আরও বেশী চিৎকার করতে লাগলো। গর্তে কিছু মাটি ফেলার পর, কৃষক শেষ বারের মতো গর্তের দিকে দেখল, তিনি বিস্মিত হয়ে গেল গর্তে যা দেখল। গর্তে যত বার বেলচা থেকে মাটি পরতে লাগলো, গাধাটা তা দেহ থেকে মাটি গুলো ঝেড়ে সে ঐ মাটির উপর তার পা গুলো রাখতে লাগলো। কৃষকের প্রতিবেশীরা অবিরাম ভাবে বেলচা দিয়ে মাটি ফেলতে লাগলো এবং প্রানীটি একইভাবে তার দেহ থেকে মাটি গুলো ঝেড়ে সে ঐ মাটির উপর তার পা গুলো রাখতে লাগলো। একসময় দেখা গেল গাধাটা ঠিক গর্তের উপরে উঠে আসল এবং তার জীবনটা ফিরে পেল।
এই গাধাটার মতই প্রতিনিয়ত ময়লা এসে আমাদের জীবনে পরছে। জীবনকে যদি সুন্দর করতে চান ঐ ময়লা গুলো জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলে উপরের দিকে যান।
জীবনের প্রতিটি সমস্যা এক একটি মাটি ভরা বেলচার মতো, আমরা সমস্যার চাপে হারিয়ে যেতে পারি যদি না সেগুলো ঠেলে তার উপর দাঁড়াতে না পারি।
মাতৃভাষা ও ইসলাম
ভাষা। মানুষের প্রতি মহান আল্লাহ’র এক অনন্য উপহার। ভাষার মাধ্যমেই
মানুষ প্রকাশ করে হৃদয়ের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, আনন্দ-বেদনার আবেগময় অনুভূতি।
কিন্তু পৃথিবীর সকল মানুষ একই ভাষায় কথা বলে না; তাদের একেকজনের ভাব
প্রকাশের শব্দমালা অন্যজন থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ! বিস্ময়ের বিষয় হলো,
একই ভাষায় যারা কথা বলে, তাদের বিভিন্ন শহর ও জনপদের ভাষাও আলাদা। তাছাড়া,
প্রত্যেকের বলার রীতি, উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গীর বিভিন্নতা তো আছেই। এ বিষয়টিকে
আল্লাহ তায়ালা তার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন এভাবে- وَمِنْ آيَاتِهِ
خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ
وَأَلْوَانِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ অর্থাৎ, আর
তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও
বর্ণের বৈচিত্র। অবশ্যই এর মধ্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। (সূরা
রূম : ৩২)
আল্লাহই ভাষার প্রথম শিক্ষক :
আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে প্রথমেই তাকে ভাষা শিখিয়েছেন, শিখিয়েছেন কথা বলার নান্দনিক শৈলী। কুরআনের ভাষ্য, خَلَقَ الْإِنسَانَ. عَلَّمَهُ الْبَيَانَ অর্থাৎ, তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন। (সূরা আর-রাহমান : ৩-৪)
এখানে, ‘আল-ইনসান’ তথা ‘মানুষ’ বলতে আদম (আ)-কে বুঝানো হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা)-এর মতে, ‘বায়ান’ তথা ‘কথা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, “সকল কিছুর নাম”। (যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا অর্থাৎ, আর আল্লাহ আদমকে শেখালেন সকল কিছুর নাম। সুরা বাক্বারাহ : ৩১)। বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ আদম (আ)-কে সকল ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি সাতশত ভাষায় কথা বলতে পারতেন, যার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হচ্ছে ‘আরবী’। (তাফসীর আল খাযেন, মাযহারী)
নবী-রসুলদের ভাষা :
যুগে যুগে আল্লাহর সকল নবী ও রাসুল তাদের স্বজাতির ভাষায় প্রেরিত হয়েছেন। এর কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে কুরআনে। বলা হয়েছে, وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ অর্থাৎ, আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্ব-জাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি। যেন সে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝাতে পারে। অত:পর আল্লাহ যাকে চান তাকে পথভ্রষ্ট করেন, আর যাকে চান তাকে হেদায়াত দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও মহাজ্ঞানী। (সূরা ইবরাহীম : ০৪)
এ কথার সমর্থনে হাদীসেও বর্ণনা এসেছে, عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “لَمْ يَبْعَثِ اللَّهُ، عَزَّوَجَلَّ، نَبِيًّا إِلَّا بِلُغَةِ قَوْمِهِ”. অর্থাৎ, আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা) বলেছেন, আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে তার স্ব-জাতির ভাষায় প্রেরণ করেছেন। (আহমদ)
আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) বলেন, هَذَا مِنْ لُطْفِهِ تَعَالَى بِخَلْقِهِ: أَنَّهُ يُرْسِلُ إِلَيْهِمْ رُسُلًا مِنْهُمْ بِلُغَاتِهِمْ لِيَفْهَمُوا عَنْهُمْ مَا يُرِيدُونَ وَمَا أُرْسِلُوا بِهِ إِلَيْهِمْ রাসুলরা মাতৃভাষা-ভাষী হওয়ার কারণ হচ্ছে, যেন তাদের জাতি রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য এবং তারা কী নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন তা বুঝতে পারে। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম)
আরবদের জন্য যেমন অনারব রাসুল প্রেরণ সংগত নয়;, তেমনি সংগত নয় অনারবদের জন্য আরবীভাষী রাসুল প্রেরণও। এ কারণে, সকল ভাষায় কুরআনের অনুবাদ করা আবশ্যক। (আওদাহুত্ তাফাসীর)
আসমানী কিতাবের ভাষা :
নবী-রাসুলরা যেমন স্ব-জাতীয় ভাষা-ভাষী ছিলেন, তাদের ওপর প্রেরিত আসমানী কিতাবও ছিল একই ভাষায়। ঈসা (আ) এর মাতৃভাষা ছিল সুরিয়ানি, এ ভাষায়ই তার ওপর ইনজিল অবতীর্ণ হয়। মূসা (আ) এর মাতৃভাষা ইবরানি হওয়ায় এ ভাষায়ই তাওরাত নাযিল হয়। যাবুর নাযিল হয় ইউনানি ভাষায়, কারণ তা-ই ছিল দাঊদ (আ) এর ভাষা। আর মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয় রাসুল মুহাম্মদ (স)-এর মাতৃভাষা আরবিতে।
কুরআনের ভাষা আরবি কেন ?
কুরআনের ভাষা আরবি হওয়ার একমাত্র কারণ, রাসুল (সা) এর মাতৃভাষা ছিল আরবি। তিনি যাদের কাছে প্রেরিত হয়েছেন তাদের ভাষাও আরবি। সূতরাং সংগত কারণেই কুরআনকে আল্লাহ আরবি ভাষায় নাযিল করেছেন। মূলত: নবী-রাসুল ও কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্যই হল মানুষের কাছে হেদায়াতের বাণী তুলে ধরা। যা মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কখনোই সম্ভব নয়। কুরআনের নিন্মোক্ত আয়াতগুলোতে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিই ব্যাখ্যা করা হয়েছে সুদৃঢ়ভাবে। ইরশাদ হচ্ছে-
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
০ আমি আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা স্মরণ রাখে। (সূরা দুখান : ১৮)
وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ .
০ আর এভাবেই আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি জনপদসমূহের কেন্দ্র (মক্কানগরী) ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা শুরা : ০৭)
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
০ আমি একে আরবী ভাষায় কুরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা ইউসুফ : ০২)
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِينَ وَتُنذِرَ بِهِ قَوْمًا لُّدًّا
০ আমি কুরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি এর দ্বারা মুত্তাকীদের সুসংবাদ দেন এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন। (সূরা মারইয়াম : ৯৭)
إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
০ আমি একে করেছি কুরআন – আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পারো। (সূরা যুখরূফ : ০৩)
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَّقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آيَاتُهُ ۖ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ ۗ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ ۖ وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى ۚ أُولَٰئِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ .
০ আমি যদি একে অনারব ভাষায় কুরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয় নি কেন ? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী ! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার স্বরূপ। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কুরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়। (সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ্ : ৪৪)
ইসলাম প্রচারের মাধ্যম মাতৃভাষা :
কোন ভাষার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা ইসলামের আলোকে সংগত নয়। বরং কুরআন-হাদীসের ভাষা অপরিহার্যভাবে শেখার পাশাপাশি মাতৃভাষাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে দাওয়াত দানের উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য।
নবী (সা) আরব গোত্রে জন্ম নিয়েছেন। তাঁর ভাষা আরবি। পার্শ্ববর্তী অনারবীয় অঞ্চলে যখন তিনি দূত পাঠাতেন, তাদেরকে তাদের নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে কুরআন বুঝানো হতো। (মায়ালিমুত্ তানযিল : ইমাম বাগভী)
ভাষার সহজবোধ্যতার জন্য কুরআন সাতটি পঠনরীতিতে নাযিল হয়েছে। রাসুল (সা) বলেছেন, إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ “কুরআন সাতটি পঠনরীতিতে নাযিল হয়েছে। সূতরাং তা থেকে যা সহজ মনে হয়, তা-ই পড়।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি, নাসায়ী)
এ থেকে একটা বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলো যে, যাদের কাছে যে ভাষায় দাওয়াত উপস্থাপন করলে তারা সহজেই বুঝতে পারবে, তাদের কাছে তা সে ভাষায়ই উপস্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আঞ্চলিকতার আশ্রয় নেয়াও দূষণীয় নয়, বরং তা প্রশংসনীয় ও দা‘য়ীর প্রজ্ঞার বহি:প্রকাশই বটে।
নির্ভুল শব্দচয়ন ও বিশুদ্ধ উচ্চারণ :
ভাষাশৈলী ও সাহিত্য-অলংকারের বিশুদ্ধতম উদাহরণ হচ্ছে পবিত্র কুরআন। এর পরপরই রাসুল (সা) এর অমীয় বাণীসমূহ উৎকর্ষতার মানদণ্ডে কালোত্তীর্ণ হয়ে আছে। রাসুল (সা) এর ভাষা ছিল হৃদয়গ্রাহী, শব্দচয়ন ছিল আকর্ষণীয়। তিনি বলেছেন, আরবদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী।
একবার এক সাহাবী রাসুল (সা)-এর নিকট এসে বললেন, ‘আ-আলিজু ?’ (ঢোকা অর্থে এই শব্দের ব্যবহার আরবী ভাষায় থাকলেও অনুমতি প্রার্থনার ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট নয়।) তখন রাসুল (সা) তার দাসীকে বললেন, বাইরে গিয়ে তাকে একথা বলতে বল, “আসসালামু আলাইকুম, আ-আদখুলু ?” কারণ সে সুন্দরভাবে অনুমতি প্রার্থনা করে নি। (আল-আদাবুল মুফরাদ, আবু দাঊদ)
সহীহ্ মুসলিমে “আল-আলফাযূ মিনাল আদাব” শিরোনামে উপযুক্ত শব্দচয়ন সংক্রান্ত একটি অধ্যায়ই আছে। সেখানে বর্ণিত হাদীসসমূহে রাসুল (সা) ভুল শব্দপ্রয়োগের সংশোধনী এনেছেন এভাবে : ‘আঙুর’কে ‘কারম’ বলো না, ‘ইনাব’ কিংবা ‘হাবালাহ’ বলো। কাউকে ‘দাস’ না বলে ‘চাকর’ বলো, কারণ সবাই আল্লাহর দাস ও দাসী; মনিবকে ‘প্রভু’ বলো না, ‘নেতা’ বলো। ‘আমার আত্মা খারাপ হয়ে গেছে’ একথা বলো না; বলো, ‘আমার আত্মা অনুতাপশূন্য হয়ে গেছে’।
রাসুল (সা) এর পরেই অলংকারপূর্ণ ভাষা প্রয়োগের দিক থেকে আলী (রা) এর স্থান। তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ কথা ও বক্তৃতার একটি সংকলনও রয়েছে। যার নাম ‘নাহ্জুল বালাগাহ্’।
সঠিক উচ্চারণের ক্ষেত্রেও, রাসুল (সা) তো বটেই, সাহাবায়ে কেরামও অত্যধিক সতর্ক ও সিরিয়াস ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) তার ছেলেকে ভুল উচ্চারণের কারণে প্রহার করতেন। عن عبيد الله عن نافع قال : كان بن عمر يضرب اللحن قال الشيخ الألباني : صحيح ولده على (আল-আদাবুল মুফরাদ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ)
উমর (রা) একবার তীর নিক্ষেপরত দুই ব্যক্তিকে অতিক্রম করছিলেন। তাদের একজন অন্যজনকে বলল, ‘আসাবতা’ অর্থাৎ তুমি নির্ভুলভাবে তীর ছুঁড়েছো। (ঐ ব্যক্তির উচ্চারণে ভুল ছিল; সে ‘সোয়াদ’ এর উচ্চারণ করল ‘সীন’ এর মত) তখন উমর (রা) বললেন, উচ্চারণের ভুল তীর নিক্ষেপের ভুলের চেয়েও মারাত্মক। مر عمر بن الخطاب رضي الله عنه برجلين يرميان فقال أحدهما للآخر أسبت فقال عمر سوء اللحن أشد من سوء الرمي (আল-আদাবুল মুফরাদ)
মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো :
একটি সুন্দর কথা মানুষের হৃদয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বীজ বপন করতে পারে। দু:খ- ক্রোধ ও হিংসার ক্লান্তি মুছে দিয়ে ছড়াতে পারে প্রশান্তি ও বিশ্বাসের সজীবতা। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন, وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسْناً আর তোমরা মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো। (সূরা বাক্বারাহ : ৮৩)
এমন কি, কারো সাথে সংগত কারণে বিতর্ক করতে হলেও তা সুন্দর ভাষায় উপস্থাপন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এভাবে : ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ হে নবী (সা)! আপনার রবের পথে আহবান করুন প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে। আর তাদের সাথে বিতর্ক করুন সর্বোত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল : ১২৫)
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ ‘কথা’কে ‘পবিত্র’ ও ‘অপবিত্র’ এ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করে তাদের চমৎকার উপমা প্রদান করেছেন। যেমন :
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ. وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِن فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ
তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন ? পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। যার মূল সুদৃঢ় এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত। সে তার পালনকর্তার অনুমতিক্রমে প্রতিনিয়ত ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্যে উপমা বর্ণনা করেন, যাতে তারা শিক্ষা লাভ করে। এবং মন্দ-বাক্যের উপমা একটি মন্দ-বৃক্ষের মত। যার মূল ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন । যার কোন স্থায়িত্ব নেই। (সূরা ইবরাহীম ২৪-২৬)
এখানে পবিত্র বাক্যের অর্থ হচ্ছে তাওহীদের বাণী – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অথবা এর দ্বারা সব ধরণের ভাল কথাকেই বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ পরস্পর বলে থাকে। যে কথা ভয়-ভীতি দূর করে এবং ভালবাসা বৃদ্ধি করে। অপরদিকে, মন্দ-বাক্য হচ্ছে কুফরী কথা-বার্তা। অথবা সকল প্রকার অশ্লীল-দুর্বল শব্দ, যা আত্মার মধ্যে মন্দ প্রভাব ও প্রচ্ছন্ন বিদ্বেষ ছড়ায়। (আওদাহুত তাফাসীর)
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلاً كَلِمَةً طَيِّبَةً} هي كلمة التوحيد، أو هي كل كلمة طيبة يقولها الإنسان لأخيه الإنسان؛ فتهدىء من روعه، وتزيد في حبه {وَمَثلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ} هي كلمة الكفر، أو كل كلمة رديئة بذيئة؛ تترك أثراً سيئاً في النفوس، وضغناً كامناً في القلوب ”
উপসংহার :
মাতৃভাষা চর্চার প্রতি ইসলাম যে গুরুত্বারোপ করেছে, তা এককথায় অতুলনীয় ! যার ভাষা যা-ই হোক, তা উচ্চারণ, শব্দচয়ন, বাক্যবিন্যাস ও উপস্থাপনায় আকর্ষণীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর মুসলিম হিসেবে সবারই দায়িত্ব হচ্ছে, ইসলামের বাণীকে অন্যের সামনে তার মাতৃভাষায় উপস্থাপন করা। এ উপমহাদেশের মুসলমানরা একসময় ইংরেজী শেখা হারাম মনে করত, বাংলাকে বলত হিন্দুর ভাষা। আরবী-ঊর্দু-ফার্সীকেই তথাকথিত ‘ইসলামী ভাষা’ মনে করত তারা। অজ্ঞতার কারণেই এসব হয়েছিল। কবি সত্যই বলেছেন, “যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ/সেই বাক্য বোঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন”। (আবদুল হাকিম/বঙ্গবাণী)
বিলাল হোসাইন নূরী
লেখক : এমফিল (গবেষক), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
আল্লাহই ভাষার প্রথম শিক্ষক :
আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে প্রথমেই তাকে ভাষা শিখিয়েছেন, শিখিয়েছেন কথা বলার নান্দনিক শৈলী। কুরআনের ভাষ্য, خَلَقَ الْإِنسَانَ. عَلَّمَهُ الْبَيَانَ অর্থাৎ, তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন। (সূরা আর-রাহমান : ৩-৪)
এখানে, ‘আল-ইনসান’ তথা ‘মানুষ’ বলতে আদম (আ)-কে বুঝানো হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা)-এর মতে, ‘বায়ান’ তথা ‘কথা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, “সকল কিছুর নাম”। (যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا অর্থাৎ, আর আল্লাহ আদমকে শেখালেন সকল কিছুর নাম। সুরা বাক্বারাহ : ৩১)। বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ আদম (আ)-কে সকল ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি সাতশত ভাষায় কথা বলতে পারতেন, যার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হচ্ছে ‘আরবী’। (তাফসীর আল খাযেন, মাযহারী)
নবী-রসুলদের ভাষা :
যুগে যুগে আল্লাহর সকল নবী ও রাসুল তাদের স্বজাতির ভাষায় প্রেরিত হয়েছেন। এর কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে কুরআনে। বলা হয়েছে, وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ অর্থাৎ, আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্ব-জাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি। যেন সে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝাতে পারে। অত:পর আল্লাহ যাকে চান তাকে পথভ্রষ্ট করেন, আর যাকে চান তাকে হেদায়াত দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও মহাজ্ঞানী। (সূরা ইবরাহীম : ০৪)
এ কথার সমর্থনে হাদীসেও বর্ণনা এসেছে, عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “لَمْ يَبْعَثِ اللَّهُ، عَزَّوَجَلَّ، نَبِيًّا إِلَّا بِلُغَةِ قَوْمِهِ”. অর্থাৎ, আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা) বলেছেন, আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে তার স্ব-জাতির ভাষায় প্রেরণ করেছেন। (আহমদ)
আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) বলেন, هَذَا مِنْ لُطْفِهِ تَعَالَى بِخَلْقِهِ: أَنَّهُ يُرْسِلُ إِلَيْهِمْ رُسُلًا مِنْهُمْ بِلُغَاتِهِمْ لِيَفْهَمُوا عَنْهُمْ مَا يُرِيدُونَ وَمَا أُرْسِلُوا بِهِ إِلَيْهِمْ রাসুলরা মাতৃভাষা-ভাষী হওয়ার কারণ হচ্ছে, যেন তাদের জাতি রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য এবং তারা কী নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন তা বুঝতে পারে। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম)
আরবদের জন্য যেমন অনারব রাসুল প্রেরণ সংগত নয়;, তেমনি সংগত নয় অনারবদের জন্য আরবীভাষী রাসুল প্রেরণও। এ কারণে, সকল ভাষায় কুরআনের অনুবাদ করা আবশ্যক। (আওদাহুত্ তাফাসীর)
আসমানী কিতাবের ভাষা :
নবী-রাসুলরা যেমন স্ব-জাতীয় ভাষা-ভাষী ছিলেন, তাদের ওপর প্রেরিত আসমানী কিতাবও ছিল একই ভাষায়। ঈসা (আ) এর মাতৃভাষা ছিল সুরিয়ানি, এ ভাষায়ই তার ওপর ইনজিল অবতীর্ণ হয়। মূসা (আ) এর মাতৃভাষা ইবরানি হওয়ায় এ ভাষায়ই তাওরাত নাযিল হয়। যাবুর নাযিল হয় ইউনানি ভাষায়, কারণ তা-ই ছিল দাঊদ (আ) এর ভাষা। আর মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয় রাসুল মুহাম্মদ (স)-এর মাতৃভাষা আরবিতে।
কুরআনের ভাষা আরবি কেন ?
কুরআনের ভাষা আরবি হওয়ার একমাত্র কারণ, রাসুল (সা) এর মাতৃভাষা ছিল আরবি। তিনি যাদের কাছে প্রেরিত হয়েছেন তাদের ভাষাও আরবি। সূতরাং সংগত কারণেই কুরআনকে আল্লাহ আরবি ভাষায় নাযিল করেছেন। মূলত: নবী-রাসুল ও কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্যই হল মানুষের কাছে হেদায়াতের বাণী তুলে ধরা। যা মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কখনোই সম্ভব নয়। কুরআনের নিন্মোক্ত আয়াতগুলোতে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিই ব্যাখ্যা করা হয়েছে সুদৃঢ়ভাবে। ইরশাদ হচ্ছে-
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
০ আমি আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা স্মরণ রাখে। (সূরা দুখান : ১৮)
وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ .
০ আর এভাবেই আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি জনপদসমূহের কেন্দ্র (মক্কানগরী) ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা শুরা : ০৭)
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
০ আমি একে আরবী ভাষায় কুরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা ইউসুফ : ০২)
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِينَ وَتُنذِرَ بِهِ قَوْمًا لُّدًّا
০ আমি কুরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি এর দ্বারা মুত্তাকীদের সুসংবাদ দেন এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন। (সূরা মারইয়াম : ৯৭)
إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
০ আমি একে করেছি কুরআন – আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পারো। (সূরা যুখরূফ : ০৩)
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَّقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آيَاتُهُ ۖ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ ۗ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ ۖ وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى ۚ أُولَٰئِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ .
০ আমি যদি একে অনারব ভাষায় কুরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয় নি কেন ? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী ! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার স্বরূপ। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কুরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়। (সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ্ : ৪৪)
ইসলাম প্রচারের মাধ্যম মাতৃভাষা :
কোন ভাষার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা ইসলামের আলোকে সংগত নয়। বরং কুরআন-হাদীসের ভাষা অপরিহার্যভাবে শেখার পাশাপাশি মাতৃভাষাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে দাওয়াত দানের উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য।
নবী (সা) আরব গোত্রে জন্ম নিয়েছেন। তাঁর ভাষা আরবি। পার্শ্ববর্তী অনারবীয় অঞ্চলে যখন তিনি দূত পাঠাতেন, তাদেরকে তাদের নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে কুরআন বুঝানো হতো। (মায়ালিমুত্ তানযিল : ইমাম বাগভী)
ভাষার সহজবোধ্যতার জন্য কুরআন সাতটি পঠনরীতিতে নাযিল হয়েছে। রাসুল (সা) বলেছেন, إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ “কুরআন সাতটি পঠনরীতিতে নাযিল হয়েছে। সূতরাং তা থেকে যা সহজ মনে হয়, তা-ই পড়।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি, নাসায়ী)
এ থেকে একটা বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলো যে, যাদের কাছে যে ভাষায় দাওয়াত উপস্থাপন করলে তারা সহজেই বুঝতে পারবে, তাদের কাছে তা সে ভাষায়ই উপস্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আঞ্চলিকতার আশ্রয় নেয়াও দূষণীয় নয়, বরং তা প্রশংসনীয় ও দা‘য়ীর প্রজ্ঞার বহি:প্রকাশই বটে।
নির্ভুল শব্দচয়ন ও বিশুদ্ধ উচ্চারণ :
ভাষাশৈলী ও সাহিত্য-অলংকারের বিশুদ্ধতম উদাহরণ হচ্ছে পবিত্র কুরআন। এর পরপরই রাসুল (সা) এর অমীয় বাণীসমূহ উৎকর্ষতার মানদণ্ডে কালোত্তীর্ণ হয়ে আছে। রাসুল (সা) এর ভাষা ছিল হৃদয়গ্রাহী, শব্দচয়ন ছিল আকর্ষণীয়। তিনি বলেছেন, আরবদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী।
একবার এক সাহাবী রাসুল (সা)-এর নিকট এসে বললেন, ‘আ-আলিজু ?’ (ঢোকা অর্থে এই শব্দের ব্যবহার আরবী ভাষায় থাকলেও অনুমতি প্রার্থনার ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট নয়।) তখন রাসুল (সা) তার দাসীকে বললেন, বাইরে গিয়ে তাকে একথা বলতে বল, “আসসালামু আলাইকুম, আ-আদখুলু ?” কারণ সে সুন্দরভাবে অনুমতি প্রার্থনা করে নি। (আল-আদাবুল মুফরাদ, আবু দাঊদ)
সহীহ্ মুসলিমে “আল-আলফাযূ মিনাল আদাব” শিরোনামে উপযুক্ত শব্দচয়ন সংক্রান্ত একটি অধ্যায়ই আছে। সেখানে বর্ণিত হাদীসসমূহে রাসুল (সা) ভুল শব্দপ্রয়োগের সংশোধনী এনেছেন এভাবে : ‘আঙুর’কে ‘কারম’ বলো না, ‘ইনাব’ কিংবা ‘হাবালাহ’ বলো। কাউকে ‘দাস’ না বলে ‘চাকর’ বলো, কারণ সবাই আল্লাহর দাস ও দাসী; মনিবকে ‘প্রভু’ বলো না, ‘নেতা’ বলো। ‘আমার আত্মা খারাপ হয়ে গেছে’ একথা বলো না; বলো, ‘আমার আত্মা অনুতাপশূন্য হয়ে গেছে’।
রাসুল (সা) এর পরেই অলংকারপূর্ণ ভাষা প্রয়োগের দিক থেকে আলী (রা) এর স্থান। তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ কথা ও বক্তৃতার একটি সংকলনও রয়েছে। যার নাম ‘নাহ্জুল বালাগাহ্’।
সঠিক উচ্চারণের ক্ষেত্রেও, রাসুল (সা) তো বটেই, সাহাবায়ে কেরামও অত্যধিক সতর্ক ও সিরিয়াস ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) তার ছেলেকে ভুল উচ্চারণের কারণে প্রহার করতেন। عن عبيد الله عن نافع قال : كان بن عمر يضرب اللحن قال الشيخ الألباني : صحيح ولده على (আল-আদাবুল মুফরাদ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ)
উমর (রা) একবার তীর নিক্ষেপরত দুই ব্যক্তিকে অতিক্রম করছিলেন। তাদের একজন অন্যজনকে বলল, ‘আসাবতা’ অর্থাৎ তুমি নির্ভুলভাবে তীর ছুঁড়েছো। (ঐ ব্যক্তির উচ্চারণে ভুল ছিল; সে ‘সোয়াদ’ এর উচ্চারণ করল ‘সীন’ এর মত) তখন উমর (রা) বললেন, উচ্চারণের ভুল তীর নিক্ষেপের ভুলের চেয়েও মারাত্মক। مر عمر بن الخطاب رضي الله عنه برجلين يرميان فقال أحدهما للآخر أسبت فقال عمر سوء اللحن أشد من سوء الرمي (আল-আদাবুল মুফরাদ)
মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো :
একটি সুন্দর কথা মানুষের হৃদয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বীজ বপন করতে পারে। দু:খ- ক্রোধ ও হিংসার ক্লান্তি মুছে দিয়ে ছড়াতে পারে প্রশান্তি ও বিশ্বাসের সজীবতা। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন, وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسْناً আর তোমরা মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো। (সূরা বাক্বারাহ : ৮৩)
এমন কি, কারো সাথে সংগত কারণে বিতর্ক করতে হলেও তা সুন্দর ভাষায় উপস্থাপন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এভাবে : ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ হে নবী (সা)! আপনার রবের পথে আহবান করুন প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে। আর তাদের সাথে বিতর্ক করুন সর্বোত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল : ১২৫)
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ ‘কথা’কে ‘পবিত্র’ ও ‘অপবিত্র’ এ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করে তাদের চমৎকার উপমা প্রদান করেছেন। যেমন :
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ. وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِن فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ
তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন ? পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। যার মূল সুদৃঢ় এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত। সে তার পালনকর্তার অনুমতিক্রমে প্রতিনিয়ত ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্যে উপমা বর্ণনা করেন, যাতে তারা শিক্ষা লাভ করে। এবং মন্দ-বাক্যের উপমা একটি মন্দ-বৃক্ষের মত। যার মূল ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন । যার কোন স্থায়িত্ব নেই। (সূরা ইবরাহীম ২৪-২৬)
এখানে পবিত্র বাক্যের অর্থ হচ্ছে তাওহীদের বাণী – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অথবা এর দ্বারা সব ধরণের ভাল কথাকেই বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ পরস্পর বলে থাকে। যে কথা ভয়-ভীতি দূর করে এবং ভালবাসা বৃদ্ধি করে। অপরদিকে, মন্দ-বাক্য হচ্ছে কুফরী কথা-বার্তা। অথবা সকল প্রকার অশ্লীল-দুর্বল শব্দ, যা আত্মার মধ্যে মন্দ প্রভাব ও প্রচ্ছন্ন বিদ্বেষ ছড়ায়। (আওদাহুত তাফাসীর)
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلاً كَلِمَةً طَيِّبَةً} هي كلمة التوحيد، أو هي كل كلمة طيبة يقولها الإنسان لأخيه الإنسان؛ فتهدىء من روعه، وتزيد في حبه {وَمَثلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ} هي كلمة الكفر، أو كل كلمة رديئة بذيئة؛ تترك أثراً سيئاً في النفوس، وضغناً كامناً في القلوب ”
উপসংহার :
মাতৃভাষা চর্চার প্রতি ইসলাম যে গুরুত্বারোপ করেছে, তা এককথায় অতুলনীয় ! যার ভাষা যা-ই হোক, তা উচ্চারণ, শব্দচয়ন, বাক্যবিন্যাস ও উপস্থাপনায় আকর্ষণীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর মুসলিম হিসেবে সবারই দায়িত্ব হচ্ছে, ইসলামের বাণীকে অন্যের সামনে তার মাতৃভাষায় উপস্থাপন করা। এ উপমহাদেশের মুসলমানরা একসময় ইংরেজী শেখা হারাম মনে করত, বাংলাকে বলত হিন্দুর ভাষা। আরবী-ঊর্দু-ফার্সীকেই তথাকথিত ‘ইসলামী ভাষা’ মনে করত তারা। অজ্ঞতার কারণেই এসব হয়েছিল। কবি সত্যই বলেছেন, “যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ/সেই বাক্য বোঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন”। (আবদুল হাকিম/বঙ্গবাণী)
বিলাল হোসাইন নূরী
লেখক : এমফিল (গবেষক), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
Saturday, 6 June 2015
অকৃতজ্ঞ এবং স্বার্থপরের ব্যর্থতা (নৈতিক শিক্ষামূলক গল্প)
কোন এক সময়, একজন অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর মানুষ ছিলো।
সব সম্পদের মালিক হোক সেই, এটা সে পছন্দ করতো।
সে তার কোন কিছু কারও সাথে শেয়ার করতো না, এমন
কী কোন গরিব বা বন্ধুর সাথেও না।
একদিন, মানুষটি ত্রিশটি স্বর্ণ মুদ্রা হারিয়ে ফেললো। তো
সে তার বন্ধুর বাড়ি গেলো। তার এ স্বর্ণ মুদ্রা হারিয়ে যাওয়ার
দুঃখের কথা বন্ধুকে বললো। তার বন্ধুটি ছিলো একজন খুব সৎ
এবং দয়ালো ব্যক্তি।
বন্ধুর মেয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে গিয়ে বাড়ি ফিরার
পথে একটি থলে পেলো, এতে ত্রিশটি স্বর্ণ মুদ্রা ছিলো।
যখন সে
বাড়ি পৌঁছলো, রাস্তায় সে কী পেলো তা তার বাবাকে জানালো।
বাবা মেয়েকে বললো যে, এই স্বর্ণ মুদ্রা তার এক বন্ধুর এবং
তিনি তার বন্ধুকে বাড়ি আসার জন্য ডেকে পাঠালেন। যখন
সেই অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর মানুষটি তাদের বাড়ি এসে পৌঁছল,
তখন তিনি তাকে বললেন যে, কীভাবে তার মেয়ে এই স্বর্ণ
মুদ্রাগুলো পেলো।এবং তিনি বন্ধুকে এগুলো ফেরত দিলেন। স্বর্ণ
মুদ্রাগুলো গণনা করে সে মিথ্যা কথা বললো যে, তার থলেতে
চল্লিশটি স্বর্ণ মুদ্রা ছিল। দশটি স্বর্ণ মুদ্রা এখানে কম আছে এবং
এগুলো বালিকাটি নিয়ে গেছে। তখন সে হুমকি দিয়ে বললো যে,
বাকী ১০টি স্বর্ণ মুদ্রা তার কাছ থেকে আদায় করে নিবে।কিন্তু
বালিকাটির বাবা অস্বীকার করলেন।
স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ মানুষ্টি স্বর্ণ মুদ্রাগুলো না নিয়ে আদালতে
চলে গেলো; বিচারকের কাছে এভাবে মিথ্যা দাবি জানালো।
বিচারক বালিকা ও তার বাবাকে ডেকে পাঠালেন; এবং যখন
তারা আদালতে পৌঁছলেন, বিচারক বালিকাকে জিজ্ঞেস করলেন
যে, কয়টি স্বর্ণ মুদ্রা সে পেয়েছিলো। উত্তরে সে বললো, ৩০টি
স্বর্ণ মুদ্রা। তখন বিচারক স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ মানুষটিকে জিজ্ঞেস
করলো যে, কয়টি স্বর্ণ মুদ্রা সে হারিয়েছিলো; এবং সে উত্তর দিলো
যে, ৪০টি স্বর্ণ মুদ্রা। তখন বিচারক তাকে বললেন যে, এ কুড়িয়ে
পাওয়া স্বর্ণ মুদ্রাগুলো তার না। কারণ, বালিকাটি পেয়েছে ৩০টি স্বর্ণ
মুদ্রা,৪০টি না; আর সে হারিয়েছে ৪০টি স্বর্ণ মুদ্রা। সুতরাং এগুলো
তার না।
তখন বিচারক বালিকাকে বললেন যে, সে যেন এই স্বর্ণ মুদ্রাগুলো
নিয়ে যায়। যদি অন্য কেউ এগুলোর খোঁজে রিপোর্ট করে, তবে তিনি
বালিকাকে ডেকে পাঠাবেন।
বিচারক স্বার্থপর মানুষটিকে বললেন যে, যদি কোন ব্যক্তি ৪০টি
স্বর্ণ মুদ্রা পেয়ে তাঁকে রিপোর্ট করে, তবে তিনি তাকে ডেকে পাঠাবেন।
পরে স্বার্থপর স্বীকার করলো যে, সে মিথ্যা কথা বলেছিলো। আসলে
তার ত্রিশটিই স্বর্ণ মুদ্রা হারিয়ে গিয়েছিলো; কিন্তু বিচারক আর
তার কোন কথাই শুনলেন না।
শেষ কথাঃ এই গল্পটি আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে, সর্বদা সৎ হতে
হবে এবং অসৎ ব্যক্তির জন্য ব্যর্থতা অপরিহার্য।
সব সম্পদের মালিক হোক সেই, এটা সে পছন্দ করতো।
সে তার কোন কিছু কারও সাথে শেয়ার করতো না, এমন
কী কোন গরিব বা বন্ধুর সাথেও না।
একদিন, মানুষটি ত্রিশটি স্বর্ণ মুদ্রা হারিয়ে ফেললো। তো
সে তার বন্ধুর বাড়ি গেলো। তার এ স্বর্ণ মুদ্রা হারিয়ে যাওয়ার
দুঃখের কথা বন্ধুকে বললো। তার বন্ধুটি ছিলো একজন খুব সৎ
এবং দয়ালো ব্যক্তি।
বন্ধুর মেয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে গিয়ে বাড়ি ফিরার
পথে একটি থলে পেলো, এতে ত্রিশটি স্বর্ণ মুদ্রা ছিলো।
যখন সে
বাড়ি পৌঁছলো, রাস্তায় সে কী পেলো তা তার বাবাকে জানালো।
বাবা মেয়েকে বললো যে, এই স্বর্ণ মুদ্রা তার এক বন্ধুর এবং
তিনি তার বন্ধুকে বাড়ি আসার জন্য ডেকে পাঠালেন। যখন
সেই অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর মানুষটি তাদের বাড়ি এসে পৌঁছল,
তখন তিনি তাকে বললেন যে, কীভাবে তার মেয়ে এই স্বর্ণ
মুদ্রাগুলো পেলো।এবং তিনি বন্ধুকে এগুলো ফেরত দিলেন। স্বর্ণ
মুদ্রাগুলো গণনা করে সে মিথ্যা কথা বললো যে, তার থলেতে
চল্লিশটি স্বর্ণ মুদ্রা ছিল। দশটি স্বর্ণ মুদ্রা এখানে কম আছে এবং
এগুলো বালিকাটি নিয়ে গেছে। তখন সে হুমকি দিয়ে বললো যে,
বাকী ১০টি স্বর্ণ মুদ্রা তার কাছ থেকে আদায় করে নিবে।কিন্তু
বালিকাটির বাবা অস্বীকার করলেন।
স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ মানুষ্টি স্বর্ণ মুদ্রাগুলো না নিয়ে আদালতে
চলে গেলো; বিচারকের কাছে এভাবে মিথ্যা দাবি জানালো।
বিচারক বালিকা ও তার বাবাকে ডেকে পাঠালেন; এবং যখন
তারা আদালতে পৌঁছলেন, বিচারক বালিকাকে জিজ্ঞেস করলেন
যে, কয়টি স্বর্ণ মুদ্রা সে পেয়েছিলো। উত্তরে সে বললো, ৩০টি
স্বর্ণ মুদ্রা। তখন বিচারক স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ মানুষটিকে জিজ্ঞেস
করলো যে, কয়টি স্বর্ণ মুদ্রা সে হারিয়েছিলো; এবং সে উত্তর দিলো
যে, ৪০টি স্বর্ণ মুদ্রা। তখন বিচারক তাকে বললেন যে, এ কুড়িয়ে
পাওয়া স্বর্ণ মুদ্রাগুলো তার না। কারণ, বালিকাটি পেয়েছে ৩০টি স্বর্ণ
মুদ্রা,৪০টি না; আর সে হারিয়েছে ৪০টি স্বর্ণ মুদ্রা। সুতরাং এগুলো
তার না।
তখন বিচারক বালিকাকে বললেন যে, সে যেন এই স্বর্ণ মুদ্রাগুলো
নিয়ে যায়। যদি অন্য কেউ এগুলোর খোঁজে রিপোর্ট করে, তবে তিনি
বালিকাকে ডেকে পাঠাবেন।
বিচারক স্বার্থপর মানুষটিকে বললেন যে, যদি কোন ব্যক্তি ৪০টি
স্বর্ণ মুদ্রা পেয়ে তাঁকে রিপোর্ট করে, তবে তিনি তাকে ডেকে পাঠাবেন।
পরে স্বার্থপর স্বীকার করলো যে, সে মিথ্যা কথা বলেছিলো। আসলে
তার ত্রিশটিই স্বর্ণ মুদ্রা হারিয়ে গিয়েছিলো; কিন্তু বিচারক আর
তার কোন কথাই শুনলেন না।
শেষ কথাঃ এই গল্পটি আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে, সর্বদা সৎ হতে
হবে এবং অসৎ ব্যক্তির জন্য ব্যর্থতা অপরিহার্য।
শিক্ষা মূলক গল্প: ফলের ঝুড়ি
এক বাদশার একটি বাগান ছিল। বাগানটি ছিল অনেক বড় এবং বিভিন্ন স্তর
বিশিষ্ট। বাদশাহ একজন লোককে ডাকলেন। তার হাতে একটি ঝুড়ি দিয়ে বললেন, আমার
এই বাগানে যাও এবং ঝুড়ি বোঝাই করে নানা রকম ফলমুল নিয়ে আস। তুমি যদি
ঝুঁড়ি ভরে ফল আনতে পার আমি তোমাকে পুরস্কৃত করব। কিন্তু শর্ত হল, বাগানের
যে অংশ তুমি পার হবে সেখানে তুমি আর যেতে পারবে না।
লোকটি মনে করলো এটা তো কোন কঠিন কাজ নয়। সে এক দরজা দিয়ে বাগানে প্রবেশ করল। দেখল, গাছে গাছে ফল পেকে আছে। নানা জাতের সুন্দর সুন্দর ফল। কিন্তু এগুলো তার পছন্দ হল না।
সে বাগানের সামনের অংশে গেল। এখানকার ফলগুলো তার কিছুটা পছন্দ হল। কিন্তু সে ভাবল আচ্ছা থাক সামনের অংশে গিয়ে দেখি সেখানে হয়ত আরো উন্নত ফল পাব, সেখান থেকেই ফল নিয়ে ঝুঁড়ি ভরব। সে সামনে এসে পরের অংশে এসে অনেক উন্নত মানের ফল পেল।
এখানে এ সে তার মনে হল এখান থেকে কিছু ফল ছিড়ে নেই। কিন্তু পরক্ষণে ভাবতে লাগলো যে সবচেয়ে ভাল ফলই ঝুড়িতে নিবে। তাই সে সামনে এগিয়ে বাগানের সর্বশেষ অংশে প্রবেশ করল।
সে এখানে এসে দেখল ফলের কোন চিহ্ন ই নেই। অতএব সে আফসোস করতে লাগল আর বলতে লাগল, হায় আমি যদি বাগানে ঢুকেই ফল সংগ্রহ করতাম তাহলে আমার ঝুড়ি এখন খালি থাকত না। আমি এখন বাদশাকে কি করে মুখ দেখাব।
ঘটনা বর্ণনা করার পর শায়েখ গজালি (রহ:) বলেন, বন্ধুগণ, বাদশাহ হলেন আল্লাহ, আর বাগানে প্রবেশ কারি লোকটি হল তুমি। আর ঝুড়ি দ্বারা উদ্দেশ্য হল তোমার আমলনামা। আর বাগান দ্বারা উদ্দেশ্য হল তোমার জীবন। বাগানের বিভিন্ন অংশ তোমার জীবনের বিভিন্ন ধাপ। আর তোমাকে নেক কাজের ফল ছিড়তে বলা হয়েছে, কিন্তু তুমি প্রতিদিনই ভাব, আগামী কাল থেকে ফল ছেড়া আরম্ভ করব। আগামী দিন আগামী দিন করতে করতে তোমার জীবনে আর আগামী দিন আসবে না। এভাবেই তুমি রিক্ত হস্তে মাওলার সামনে হাজির হবে।
এজন্য মুফতি তাকি উসমানী (রহ.) বলেন, জীবনের সময়গুলো অতিবাহিত হচ্ছে। জীবন কেটে যাচ্ছে জানা নেই বয়স বাকি কতো। সুতরাং নেক কাজের বাসনা জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে তা করে ফেলুন। কে জানে কিছুক্ষণ পরে মনের এই আগ্রহ থাকবে কি না? এটাও জানা নাই একটু পর বেঁচে থাকবো কিনা, যদিও বেঁচে থাকি হয়তো দুনিয়াবি কোন ব্যস্ততা সামনে এসে পড়বে।
অতএব নেক কাজ যখনি করতে মন চায় তখনি করে নিন। জীবন থেকে ফায়দা লুটে নিন। তাই জীবন নামক আল্লাহ্র অনুগ্রহে দেয়া বাগানে বিচরণ কালে আমলনামার বিশেষ ঝুড়িতে যখনই সুযোগ পাওয়া যায় তখনি নেকী নামক ফল দিয়ে প্রথম থেকেই ভরা শুরু করতে হবে। পরে সময় পাওয়া যাবে কিনা জানা নাই ।
লোকটি মনে করলো এটা তো কোন কঠিন কাজ নয়। সে এক দরজা দিয়ে বাগানে প্রবেশ করল। দেখল, গাছে গাছে ফল পেকে আছে। নানা জাতের সুন্দর সুন্দর ফল। কিন্তু এগুলো তার পছন্দ হল না।
সে বাগানের সামনের অংশে গেল। এখানকার ফলগুলো তার কিছুটা পছন্দ হল। কিন্তু সে ভাবল আচ্ছা থাক সামনের অংশে গিয়ে দেখি সেখানে হয়ত আরো উন্নত ফল পাব, সেখান থেকেই ফল নিয়ে ঝুঁড়ি ভরব। সে সামনে এসে পরের অংশে এসে অনেক উন্নত মানের ফল পেল।
এখানে এ সে তার মনে হল এখান থেকে কিছু ফল ছিড়ে নেই। কিন্তু পরক্ষণে ভাবতে লাগলো যে সবচেয়ে ভাল ফলই ঝুড়িতে নিবে। তাই সে সামনে এগিয়ে বাগানের সর্বশেষ অংশে প্রবেশ করল।
সে এখানে এসে দেখল ফলের কোন চিহ্ন ই নেই। অতএব সে আফসোস করতে লাগল আর বলতে লাগল, হায় আমি যদি বাগানে ঢুকেই ফল সংগ্রহ করতাম তাহলে আমার ঝুড়ি এখন খালি থাকত না। আমি এখন বাদশাকে কি করে মুখ দেখাব।
ঘটনা বর্ণনা করার পর শায়েখ গজালি (রহ:) বলেন, বন্ধুগণ, বাদশাহ হলেন আল্লাহ, আর বাগানে প্রবেশ কারি লোকটি হল তুমি। আর ঝুড়ি দ্বারা উদ্দেশ্য হল তোমার আমলনামা। আর বাগান দ্বারা উদ্দেশ্য হল তোমার জীবন। বাগানের বিভিন্ন অংশ তোমার জীবনের বিভিন্ন ধাপ। আর তোমাকে নেক কাজের ফল ছিড়তে বলা হয়েছে, কিন্তু তুমি প্রতিদিনই ভাব, আগামী কাল থেকে ফল ছেড়া আরম্ভ করব। আগামী দিন আগামী দিন করতে করতে তোমার জীবনে আর আগামী দিন আসবে না। এভাবেই তুমি রিক্ত হস্তে মাওলার সামনে হাজির হবে।
এজন্য মুফতি তাকি উসমানী (রহ.) বলেন, জীবনের সময়গুলো অতিবাহিত হচ্ছে। জীবন কেটে যাচ্ছে জানা নেই বয়স বাকি কতো। সুতরাং নেক কাজের বাসনা জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে তা করে ফেলুন। কে জানে কিছুক্ষণ পরে মনের এই আগ্রহ থাকবে কি না? এটাও জানা নাই একটু পর বেঁচে থাকবো কিনা, যদিও বেঁচে থাকি হয়তো দুনিয়াবি কোন ব্যস্ততা সামনে এসে পড়বে।
অতএব নেক কাজ যখনি করতে মন চায় তখনি করে নিন। জীবন থেকে ফায়দা লুটে নিন। তাই জীবন নামক আল্লাহ্র অনুগ্রহে দেয়া বাগানে বিচরণ কালে আমলনামার বিশেষ ঝুড়িতে যখনই সুযোগ পাওয়া যায় তখনি নেকী নামক ফল দিয়ে প্রথম থেকেই ভরা শুরু করতে হবে। পরে সময় পাওয়া যাবে কিনা জানা নাই ।
গর্ভপাতের সময়কার শিশুর অব্যাক্ত বেদনা
বাচ্চা নষ্ট করার সব পদ্ধতিতেই এক ধরণের লম্বা নল
জরায়ুতে ঢুকিয়ে গর্ভের শিশুটিকে প্রথমে ক্ষত- বিক্ষত করা হয়।
পরে ভ্যাকুয়াম সাকারের মাধ্যমে শিশুটিকে শুষে আনা হয়।
গর্ভপাতের সময়কার শিশুটির অব্যাক্ত
বেদনা কারো কানে পৌঁছে না।
মানুষ নামের নরপশুর নির্মমতায়
একটি নিষ্পাপ শিশু মৃত
মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়।
যেসব মা ক্ষণিকের সুখের জন্য নিজ
গর্ভের সন্তানকে পাশবিকভাবে হত্যা করে তাদের
জন্য হৃদয় উগড়ে দেয়া সীমাহীন ঘৃণা।
জিনিস টা কি??? নিচে একটু
পড়ে দেখুন হৃদয় হীন মানুষের
হৃদয়ে ও কমপনের সৃষ্টি হবে।। …
লেখাটা লিখতে গিয়ে কতবার
যে হাত কেপেছে পড়ে দেখুন….,
নিজের বিবেকে নাড়া দেয় কিনা !!??
প্রথম মাস** হ্যালো আম্মু…..!! কেমন আছো তুমি?
জানো আমিএখন মাত্র ৩-৪ইঞ্চি লম্বা!!
কিন্তু হাত- পা সবই আছে তোমার কথা শুনতে পাই,
ভালো লাগে শুনতে।
দ্বিতীয় মাস** আম্মু,আমি হাতের
বুড়ো আঙ্গুল চুষা শিখেছি,
তুমি আমাকে দেখলে এখন
বেবি বলবে! বাইরে আসার সময়
এখনো হয়নি আমার, এখানেই উষ্ণ
অনুভব করি খুব।
তৃতীয় মাস** আম্মু
তুমি কি জানো আমি যে একটা মেয়ে?
পরী পরী লাগবে আমাকে,
আমাকে দেখলে তুমি অনেক খুশি হবে,
তুমি মাঝে মাঝে কাঁদো কেনো আম্মু?
তুমি কাঁদলে আমারও কান্না পায়…
চতুর্থ মাস** আমার মাথায় ছোট্ট
ছোট্ট চুল গজিয়েছে আম্মু
আমি হাত- পা ভালো ভাবে নাড়াতে পারি,
মাথা নাড়াতে পারি, অনেক কিছুই
করতে পারি।
পঞ্চম মাস** আম্মু তুমি ডক্টরের
কাছে কেনো গিয়েছিলে?
কি বলেছে ডক্টর? আমি তার
কথা শুনতে পারিনি, তোমার
কথা ছাড়া আমি কারো কথা শুনতে পারিনা।
ষষ্ঠ মাস** আম্মু আমি অনেক
ব্যথা পাচ্ছি আম্মু, ডক্টর সুঁচের
মতো কি যেনো আমার
শরীরে ঢুকাচ্ছে, ওদের
থামতে বলো আম্মু
আমি তোমাকে ছেড়ে কথাও
যাবোনা আম্মু…
সপ্তম মাস** আম্মু কেমন আছো?
আমি এখন স্বর্গে আছি,
একটা এন্জেল
আমাকে নিয়ে এসেছে, এন্জেল
বলেছে তোমাকে এবরশন
করতে হয়েছে,
তুমি আমাকে কেনো চাওনি আম্মু?
প্রতিটি Abortion মানে…………
একটি হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়া…
একটি হাসি থেমে যাওয়া…
দুটি হাত,যা কখনো কাউকে স্পর্শ
করতে পারবেনা…
দুটি চোখ,যা পৃথিবীর
আলো দেখবেনা…
জরায়ুতে ঢুকিয়ে গর্ভের শিশুটিকে প্রথমে ক্ষত- বিক্ষত করা হয়।
পরে ভ্যাকুয়াম সাকারের মাধ্যমে শিশুটিকে শুষে আনা হয়।
গর্ভপাতের সময়কার শিশুটির অব্যাক্ত
বেদনা কারো কানে পৌঁছে না।
মানুষ নামের নরপশুর নির্মমতায়
একটি নিষ্পাপ শিশু মৃত
মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়।
যেসব মা ক্ষণিকের সুখের জন্য নিজ
গর্ভের সন্তানকে পাশবিকভাবে হত্যা করে তাদের
জন্য হৃদয় উগড়ে দেয়া সীমাহীন ঘৃণা।
জিনিস টা কি??? নিচে একটু
পড়ে দেখুন হৃদয় হীন মানুষের
হৃদয়ে ও কমপনের সৃষ্টি হবে।। …
লেখাটা লিখতে গিয়ে কতবার
যে হাত কেপেছে পড়ে দেখুন….,
নিজের বিবেকে নাড়া দেয় কিনা !!??
প্রথম মাস** হ্যালো আম্মু…..!! কেমন আছো তুমি?
জানো আমিএখন মাত্র ৩-৪ইঞ্চি লম্বা!!
কিন্তু হাত- পা সবই আছে তোমার কথা শুনতে পাই,
ভালো লাগে শুনতে।
দ্বিতীয় মাস** আম্মু,আমি হাতের
বুড়ো আঙ্গুল চুষা শিখেছি,
তুমি আমাকে দেখলে এখন
বেবি বলবে! বাইরে আসার সময়
এখনো হয়নি আমার, এখানেই উষ্ণ
অনুভব করি খুব।
তৃতীয় মাস** আম্মু
তুমি কি জানো আমি যে একটা মেয়ে?
পরী পরী লাগবে আমাকে,
আমাকে দেখলে তুমি অনেক খুশি হবে,
তুমি মাঝে মাঝে কাঁদো কেনো আম্মু?
তুমি কাঁদলে আমারও কান্না পায়…
চতুর্থ মাস** আমার মাথায় ছোট্ট
ছোট্ট চুল গজিয়েছে আম্মু
আমি হাত- পা ভালো ভাবে নাড়াতে পারি,
মাথা নাড়াতে পারি, অনেক কিছুই
করতে পারি।
পঞ্চম মাস** আম্মু তুমি ডক্টরের
কাছে কেনো গিয়েছিলে?
কি বলেছে ডক্টর? আমি তার
কথা শুনতে পারিনি, তোমার
কথা ছাড়া আমি কারো কথা শুনতে পারিনা।
ষষ্ঠ মাস** আম্মু আমি অনেক
ব্যথা পাচ্ছি আম্মু, ডক্টর সুঁচের
মতো কি যেনো আমার
শরীরে ঢুকাচ্ছে, ওদের
থামতে বলো আম্মু
আমি তোমাকে ছেড়ে কথাও
যাবোনা আম্মু…
সপ্তম মাস** আম্মু কেমন আছো?
আমি এখন স্বর্গে আছি,
একটা এন্জেল
আমাকে নিয়ে এসেছে, এন্জেল
বলেছে তোমাকে এবরশন
করতে হয়েছে,
তুমি আমাকে কেনো চাওনি আম্মু?
প্রতিটি Abortion মানে…………
একটি হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়া…
একটি হাসি থেমে যাওয়া…
দুটি হাত,যা কখনো কাউকে স্পর্শ
করতে পারবেনা…
দুটি চোখ,যা পৃথিবীর
আলো দেখবেনা…
হাদীস
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
হতে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মুমিনের
দুঃখ দূর করে দেয়, আল্লাহ্ কেয়ামতের
দিন তার দুঃখ দূর করে দিবেন।
যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির বিপদ
দূর করে দেয়, আল্লাহ্ দুনিয়াতে ও
আখেরাতে তার বিপদ দূর করে দিবেন।
যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-
ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও
আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন
রাখবেন। যে বান্দা আপন
ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ্
সে বান্দাকে সাহায্য করবেন।
যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের জন্য কোন
রাস্তা গ্রহণ করে, তার অসীলায় আল্লাহ্
তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ
করে দিবেন। যেসব লোক আল্লাহর
ঘরসমূহের মধ্যে কোন ঘরে (অর্থাৎ
মসজিদে) সমবেত হবে, কুরআন পড়বে,
সকলে মিলিত হয়ে তার
শিক্ষা নেবে ও দেবে, তাদের উপর
অবশ্যই প্রশান্তি অবতীর্ণ হবে, রহমত
তাদের ঢেকে নেবে, ফিরিশ্তাগণ
তাদের ঘিরে থাকবে আর আল্লাহ্
তাদের কথা এমন সকলের মধ্যে উল্লেখ
করবেন যারা তাঁর কাছে উপস্থিত।
যে ব্যক্তি তার আমলের
কারণে পিছিয়ে পড়বে, তার বংশ
পরিচয়
তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।
[মুসলিম: ২৬৯৯]
হতে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মুমিনের
দুঃখ দূর করে দেয়, আল্লাহ্ কেয়ামতের
দিন তার দুঃখ দূর করে দিবেন।
যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির বিপদ
দূর করে দেয়, আল্লাহ্ দুনিয়াতে ও
আখেরাতে তার বিপদ দূর করে দিবেন।
যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-
ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও
আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন
রাখবেন। যে বান্দা আপন
ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ্
সে বান্দাকে সাহায্য করবেন।
যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের জন্য কোন
রাস্তা গ্রহণ করে, তার অসীলায় আল্লাহ্
তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ
করে দিবেন। যেসব লোক আল্লাহর
ঘরসমূহের মধ্যে কোন ঘরে (অর্থাৎ
মসজিদে) সমবেত হবে, কুরআন পড়বে,
সকলে মিলিত হয়ে তার
শিক্ষা নেবে ও দেবে, তাদের উপর
অবশ্যই প্রশান্তি অবতীর্ণ হবে, রহমত
তাদের ঢেকে নেবে, ফিরিশ্তাগণ
তাদের ঘিরে থাকবে আর আল্লাহ্
তাদের কথা এমন সকলের মধ্যে উল্লেখ
করবেন যারা তাঁর কাছে উপস্থিত।
যে ব্যক্তি তার আমলের
কারণে পিছিয়ে পড়বে, তার বংশ
পরিচয়
তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।
[মুসলিম: ২৬৯৯]
লোভের পরিণাম
একদিন একজন ইহুদী এসে হয়রত ঈসা (আঃ) কাছে আরয করলো, “হুযুর, আমি আপনার
সঙ্গে থাকতে চাই। আপনার সংসর্গ আমার খুব ভালো লাগে।“শুনে হয়রত ঈসা (আঃ)
তাকে সঙ্গী করে নিলেন। তারা চলতে চলতে একটি ছোট্ট শহরের প্রান্তে গিয়ে
পৌঁছালেন। হয়রত ঈসা (আঃ) এর সঙ্গে তিনখানা রুটি ছিল। দুজনই
ক্ষুধার্ত।তৃপ্তির সঙ্গে তারা দুটো রুটি খেলেন। তৃতীয়টি ইহুদী লোকটির কাছে
রেখে হয়রত ঈসা (আঃ)কিছু সময়ের জন্য অন্যত্র গেলেন। ফিরে এসে তিনি
রুটিখানার খোঁজ করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “রুটিখানা কোথায়?” উত্তরে
ইহুদী চোখে মুখে বিস্ময়ের ভাব এনে বলল, “আমি রুটি খাইনি। আমি আপনার রুটি
সম্পর্কে কোন খবর জানি না।”
ঈসা (আঃ) আর কোন কিছু না বলে ইহুদীকে সঙ্গে করে চলতে লাগলেন। সামনে এক নির্জন বন। বনের গাছপালায় ঢাকা পথ ধরে চলছেন দুজন। হয়রত ঈসা (আঃ) হঠাৎ দেখলেন, একটা হরিনী দুটো শাবক নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ঈসা (আঃ) একটা ছানাকে তার কাছে ডাকলেন। ছানাটি আল্লাহর নবীর ডাক শুনে তার কাছে ছুটে এলো। তিনি শাবকটিকে ধরে ফেললেন এবং আল্লাহর নামে জবাই করলেন। অতপর আল্লাহর অপার মহিমায় শাবকটি তৎক্ষনাত ভাজা হয়ে গেল। তারা দুজন পেট ভরে হরিণের কচি গোশত গেলেন। খেয়ে খুব তৃপ্ত ইহুদীটা। এবার হয়রত ঈসা (আঃ) বললেন, “হে হরিণ শাবক! জীবিত হয়ে যাও তুমি।” তৎক্ষণাত ওটা জিন্দা হয়ে তার মায়ের কাছে ফিরে গেল। ব্যাপারটা দেখে ইহুদীটা একটুও বিস্মিত হলো না। ঈসা (আঃ) এমন মুজিযা তার কঠিন মনকে নরম করতেপারলো না।
পথ চলতে চলতে ঈসা (আঃ) ইহুদীটার হাত ধরে বললেন, “ তোমাকে আল্লাহর কসম। আমার এ অলৌকিক কাজ দেখার পরও কি তোমার মনে আল্লাহর ভয় আসছে না? সত্যি করে বলো, তৃতীয় রুটিখানার কি হয়েছে?” কিন্তু উত্তরে পাষাণ হৃদয় ইহুদী বলল, “আমি আপনার রুটির কথা কিছুই জানি না।“
ঈসা (আঃ) তাকে আর কিছু না জিজ্ঞেস করে আবার পথ চলতে লাগলেন। তারা বন পেরিয়ে একটি বালুকাময় প্রান্তরে পৌঁছালেন। আল্লাহর নবী কিছু বালু একত্র করে একটা স্তূপ বানিয়ে বললেন, “হে বালুকারাশি। আল্লাহর হুকুমে সোনা হয়ে যাও।” সঙ্গে সঙ্গে বালুর ঢিবি সোনায় রুপান্তরিত হয়ে গেল। এবার আল্লাহর নবী পিন্ডটাকে ভেঙ্গে তিন ভাগ করলেন এবং বললেন, “হে ইহুদী! এ তিনটি পিন্ডের একটা পিন্ড আমার, একটা তোমার আর তৃতীয় পিন্ডটা তার, যে রুটি খেয়ে ফেলেছে।”
সোনার লোভে ইহুদীর চোখ চকচক করতে লাগলো।সঙ্গে সঙ্গে নিজের পোটলা থেকে তৃতীয় রুটিখানা বের করে বললো, “এই যে আপনার রুটি। এটা এতক্ষণ আমার কাছেই ছিল।” সোনার লোভে ইহুদী সত্য কথা বলে। তখন ঈসা (আঃ) বললেন, “তুমি যখন সত্য কথা স্বীকার করেছ, তিনটা পিন্ডই তোমার।” একথা বলে ঈসা (আঃ) ওকে ছেড়ে অন্য পথে চলে গেলেন।
সোনার তিনটি পিন্ড নিয়ে কিছু পথ চলার পর হঠাৎ করে ইহুদীর সামনে দুজন দুর্ধর্ষ ডাকাত হাজির হলো। ডাকাতদের দেখেই ইহুদী ভয়ে কাঁপতে লাগলো। সে তাদের বললো, “আমাকে প্রাণে মেরো না। তিনটি খন্ড তো আছেই। কেননা আমরা একজন এক এক খন্ড করে নিয়ে যাই।”
ডাকাতরা তাকে হুঙ্কার ছেড়ে বললো, “সে কথা পরে হবে। বেশ খিদে পেয়েছে। আগে তুই আমাদের জন্য খাবার কিনে আন।” মনে মনে ডাকাতরা ফন্ধি আটলো যে, ইহুদীটা খাবার নিয়ে এলেই তাকে খতম করে ফেলা হবে। না হলে সে আবার সোনার ভাগ চাইবে। অন্যদিকে ইহুদীটাও ফন্ধি আটলো। সে খাবার কিনে তাতে বিষ মিশিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর যেই ইহুদীটা খাবার নিয়ে এলো ডাকাতরা তার কাছ থেকে খাবারগুলো নিয়ে তাকে হত্যা করলো। এতপর তারা খাবারগুলো খেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর তারা বিষে ছটফট করতে লাগলো এবং মুখে ফেনা তুলে তারা দুজনই মারা গেল।
তিনটি লাশ পড়ে রইলো তিনটি সোনার পিন্ডের পাশে কিন্তু হাত বাড়িয়ে নেয়ার কেউ নেই। অতি লোভের পরিণাম যে কি ভয়াবহ তা আল্লাহ ঈসা(আঃ) এই ঘটনার মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছেন।
উৎসঃ ছোটদের হয়রত ঈসা (আঃ) পৃষ্ঠা ২৯ থেকে ৩৩ ।
ঈসা (আঃ) আর কোন কিছু না বলে ইহুদীকে সঙ্গে করে চলতে লাগলেন। সামনে এক নির্জন বন। বনের গাছপালায় ঢাকা পথ ধরে চলছেন দুজন। হয়রত ঈসা (আঃ) হঠাৎ দেখলেন, একটা হরিনী দুটো শাবক নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ঈসা (আঃ) একটা ছানাকে তার কাছে ডাকলেন। ছানাটি আল্লাহর নবীর ডাক শুনে তার কাছে ছুটে এলো। তিনি শাবকটিকে ধরে ফেললেন এবং আল্লাহর নামে জবাই করলেন। অতপর আল্লাহর অপার মহিমায় শাবকটি তৎক্ষনাত ভাজা হয়ে গেল। তারা দুজন পেট ভরে হরিণের কচি গোশত গেলেন। খেয়ে খুব তৃপ্ত ইহুদীটা। এবার হয়রত ঈসা (আঃ) বললেন, “হে হরিণ শাবক! জীবিত হয়ে যাও তুমি।” তৎক্ষণাত ওটা জিন্দা হয়ে তার মায়ের কাছে ফিরে গেল। ব্যাপারটা দেখে ইহুদীটা একটুও বিস্মিত হলো না। ঈসা (আঃ) এমন মুজিযা তার কঠিন মনকে নরম করতেপারলো না।
পথ চলতে চলতে ঈসা (আঃ) ইহুদীটার হাত ধরে বললেন, “ তোমাকে আল্লাহর কসম। আমার এ অলৌকিক কাজ দেখার পরও কি তোমার মনে আল্লাহর ভয় আসছে না? সত্যি করে বলো, তৃতীয় রুটিখানার কি হয়েছে?” কিন্তু উত্তরে পাষাণ হৃদয় ইহুদী বলল, “আমি আপনার রুটির কথা কিছুই জানি না।“
ঈসা (আঃ) তাকে আর কিছু না জিজ্ঞেস করে আবার পথ চলতে লাগলেন। তারা বন পেরিয়ে একটি বালুকাময় প্রান্তরে পৌঁছালেন। আল্লাহর নবী কিছু বালু একত্র করে একটা স্তূপ বানিয়ে বললেন, “হে বালুকারাশি। আল্লাহর হুকুমে সোনা হয়ে যাও।” সঙ্গে সঙ্গে বালুর ঢিবি সোনায় রুপান্তরিত হয়ে গেল। এবার আল্লাহর নবী পিন্ডটাকে ভেঙ্গে তিন ভাগ করলেন এবং বললেন, “হে ইহুদী! এ তিনটি পিন্ডের একটা পিন্ড আমার, একটা তোমার আর তৃতীয় পিন্ডটা তার, যে রুটি খেয়ে ফেলেছে।”
সোনার লোভে ইহুদীর চোখ চকচক করতে লাগলো।সঙ্গে সঙ্গে নিজের পোটলা থেকে তৃতীয় রুটিখানা বের করে বললো, “এই যে আপনার রুটি। এটা এতক্ষণ আমার কাছেই ছিল।” সোনার লোভে ইহুদী সত্য কথা বলে। তখন ঈসা (আঃ) বললেন, “তুমি যখন সত্য কথা স্বীকার করেছ, তিনটা পিন্ডই তোমার।” একথা বলে ঈসা (আঃ) ওকে ছেড়ে অন্য পথে চলে গেলেন।
সোনার তিনটি পিন্ড নিয়ে কিছু পথ চলার পর হঠাৎ করে ইহুদীর সামনে দুজন দুর্ধর্ষ ডাকাত হাজির হলো। ডাকাতদের দেখেই ইহুদী ভয়ে কাঁপতে লাগলো। সে তাদের বললো, “আমাকে প্রাণে মেরো না। তিনটি খন্ড তো আছেই। কেননা আমরা একজন এক এক খন্ড করে নিয়ে যাই।”
ডাকাতরা তাকে হুঙ্কার ছেড়ে বললো, “সে কথা পরে হবে। বেশ খিদে পেয়েছে। আগে তুই আমাদের জন্য খাবার কিনে আন।” মনে মনে ডাকাতরা ফন্ধি আটলো যে, ইহুদীটা খাবার নিয়ে এলেই তাকে খতম করে ফেলা হবে। না হলে সে আবার সোনার ভাগ চাইবে। অন্যদিকে ইহুদীটাও ফন্ধি আটলো। সে খাবার কিনে তাতে বিষ মিশিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর যেই ইহুদীটা খাবার নিয়ে এলো ডাকাতরা তার কাছ থেকে খাবারগুলো নিয়ে তাকে হত্যা করলো। এতপর তারা খাবারগুলো খেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর তারা বিষে ছটফট করতে লাগলো এবং মুখে ফেনা তুলে তারা দুজনই মারা গেল।
তিনটি লাশ পড়ে রইলো তিনটি সোনার পিন্ডের পাশে কিন্তু হাত বাড়িয়ে নেয়ার কেউ নেই। অতি লোভের পরিণাম যে কি ভয়াবহ তা আল্লাহ ঈসা(আঃ) এই ঘটনার মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছেন।
উৎসঃ ছোটদের হয়রত ঈসা (আঃ) পৃষ্ঠা ২৯ থেকে ৩৩ ।
Wednesday, 3 June 2015
আল্লাহ কেন সকল মানুষকে মুসলিম হতে বাধ্য করেন নি?
এ বিষয়টি নিয়ে অনেকের মাঝেই কিছুটা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেক মুসলিম
ভাইকেও অনেক সময় বলতে শোনা যায়, ‘তাহলে আল্লাহ কি চাইলে সবাইকে মুসলিম
বানাতে পারতেন না?’ আমরাও তখন অজ্ঞতার কারণে সাথে সাথে বলি, ‘আসলেই তো!’
সুতরাং আল্লাহই যেহেতু মানুষকে বিভিন্ন ধর্ম গ্রহণের কিংবা ভিন্ন মত
অবলম্বনের অনুমতি বা সুযোগ দিয়েছেন তাহলে আমরা কেনো তাদেরকে ইসলামের কথা
বলতে যাবো? এক্ষেত্রে অনেকে একধাপ এগিয়ে সুরায়ে কাফিরুনের মূল অংশ গুলো
বাদ দিয়ে কেবলমাত্র বিচ্ছিন্নভাবে শেষ আয়াতটি উল্লেখ করে পান্ডিত্য
ঝাড়েন। বলেন দেখেন আল্লাহই সূরায়ে কাফিরুনে বলেছেন, ‘তোমার ধর্ম তোমার,
আমার ধর্ম আমার।’ এই কথা বলে তারা মারাত্মক দু’টি অন্যায় করেন। এক, পুরো
সূরার মূলভাবকে গোপন করে বিচ্ছিন্নভাবে কেবলমাত্র শেষের আয়াতটিকে
বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা। আর শেষের আয়াতে মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ‘দীন’
শব্দের স্থলে ‘ধর্ম’ শব্দ বসিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান। অথচ
সূরায়ে কাফিরুনের পুরোটা পড়লে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য নষ্ট হতে বাধ্য। এ
ব্যাপারে আজ শুধু পুরো সূরাটি উল্লেখ করে দিচ্ছি।
“হে নবী আপনি বলুন, হে কাফির সম্প্রদায়। তোমরা যার ইবাদাত কর আমি তারইবাদাত করি না। এবং আমি যার ইবাদাত করি তোমরা তার ইবাদাতকারী নও। আর তোমরা যার ইবাদত করছ আমি তার ‘ইবাদাতকারী হব না। আর আমি যার ইবাদাত করি তোমরা তার ইবাদাতকারী হবে না। তোমাদের জন্য তোমাদের দীন আর আমার জন্য আমার দীন।” (সূরা কাফিরুন ১০৯, আয়াত ০৬)
এবার আসল কথায় আসা যাক। কাউকে কোনো কাজে বাধ্য না করা আর তাকে অন্যায় করতে সুযোগ দেয়া এক কথা নয়।একমাত্র জিন ও মানুষ ছাড়া এই মহাবিশ্বের আসমান, যমীন, পাহাড়, সাগর, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, নিহাড়িকাপুঞ্জসহ সকল সৃষ্টি প্রকৃতিগতভাবেই মহান আল্লাহর পুরোপুরি অনুগত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ
বলেন,
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ.
অর্থ: “তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? অথচ আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, সব সৃষ্টি একমাত্র আল্লাহরই অনুগত হয়ে মুসলিম হয়ে গেছে এবং তাঁর দিকেই সবাই ফিরে যাবে। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৮৩)
এই সকল সৃষ্টির কোনো একটি সামান্যতমও ব্যতিক্রম করে না। মহান আল্লাহর নির্দেশনার বাইরে যায় না। প্রত্যেকটি সৃষ্টি তার জন্য মহান আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া নির্ধারিত নিয়ম ও বিধান অনুযায়ী চলে। নির্দিষ্ট দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করে। ইরশাদ হয়েছে,
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ
الْعَلِيمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ
الْقَدِيمِ. لا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلا اللَّيْلُ
سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.
অর্থ: “সূর্য তার নিজ কক্ষপথে ঘুর্ণয় করে। এটা তার জন্য মহান পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্ধারিত। আর চন্দ্রের জন্য আমি কিছু পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি সুতরাং সে সেই পথে ঘুরে ঘুরে (মাসের শেষ সময়ে) একেবারে ক্ষীনকায় হয়ে যায়। সুর্যের ক্ষমতা নেই চন্দ্রকে ধরার আর রাতও দিবসের আগে চলে যেতে পারবে না। মূলত: প্রত্যেকটি সৃষ্টিই তার নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।” (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৩৮-৪০)
এই সকল সৃষ্টি পরিপূর্ণভাবে একমাত্র আল্লাহর অনুগত। তারা আল্লাহর দাসত্ব মেনে নিয়েছে শর্তহীনভাবে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কোনভাবেই তাদের ক্ষমতা নেই আল্লাহর বিধানে বাইরে যাবার। তারা সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করে এবং প্রশংসা করে। ইরশাদ হয়েছে,
وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَنْ فِي
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهً.
অর্থ: “আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে আছে ইচছায় অথবা অনিচছায়।” (সূরা রা’দ ১৩, আয়াত ১৫)
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ
وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ
وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ.
অর্থ: “তোমরা কি লক্ষ্য করনি যে, বস্তুত ঃ আল্লাহই এক সত্তা যাকে সেজদা করে সকলেই, যারা আছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এবং সেজদা করে সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পাহাড়, পর্বত, বৃক্ষরাজি, চতুষ্পদ জন্তু ও বহুসংখ্যক মানুষ। (সূরা হজ্জ ২২, আয়াত ১৮)
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এটা পরিস্কার হয়ে গেলো যে, মহান আল্লাহ চাইলে পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টির মতো মানুষ ও জিন সম্প্রদায়কেও প্রকৃতিগতভাবেই তার অনুগত ও বাধ্য করতে পারতেন। মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সব মানুষকে মুসলিম হতে বাধ্য করতে পারতেন। তিনি চাইলে সকল মুসলমানকেও তার সকল নিয়মাবলী যথাসময়ে এবং যথাযথভাবে পালন করতে বাধ্য করতে পারতেন। কিন্তু তিনি এটি করেন নি।কিন্তু কেনো এটা করা হয় নি? বিচক্ষণদের জন্য এটিই হচ্ছে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ নিজেই বলেন,
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا
بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ
بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ
لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ
لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَكِنْ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آَتَاكُمْ
فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُمْ
بِمَا كُنْتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ (৪৮)
অর্থঃ “সুতরাং আপনি তাদের মধ্যে ফয়সালা করুন আল্লাহ যা নাযিল করেছে তদনুসারে এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ছেড়ে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছি নির্দিষ্ট শরীয়ত ও নির্দিষ্ট পন্থা। আর যদি আল্লাহ্ চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সাইকে এক জাতি করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তাঁর মাধ্যমে। অতএব নেক কাজের প্রতি ধাবিত হও। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তারপর তিনি তোমাদের অবহিত করবেন সে বিষয়ে যাতে তোমরা মতভেদ করতে।” (সূরা মায়িদাহ ০৫: ৪৮)
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই সমগ্র মহাবিশ্বকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি সুন্দরতমভাবে সৃষ্টি করেছেন মানুষ। অনেক আদর ও মমতায় তিনি তৈরী করেছেন আমাদেরকে। তিনি ইরশাদ করছেন,
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ (৪)
অর্থ: “অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে।” (সূরা তীন ৯৫, আয়াত ০৪)
এই পৃথিবী ও তার সকল সম্পদরাজি এবং তার মধ্যকার সকল উপায় উপকরণ মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র মানুষের জন্য। এই মানুষের জন্যই তিনি সৃষ্টি করেছেন চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র। মানুষের সেবায় তিনি নিয়োজিত করেছেন সকল মাখলুকাতকে। সকল মাখলুকাত ও সৃষ্টির মাঝে তিনি মানুষকে এভাবে করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোচ্চ সম্মানিত। ইরশাদ করেন,
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آَدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي
الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى
كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا (৭০)
অর্থ: “আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিয্ক। আর আমি মানুষকে আমার অনেক সৃষ্টির উপর অনেক মর্যাদা দিয়েছি।” (সূরা ইসরা ১৭, আয়াত ৭০)
এবার চিন্তা করুন। এতো সম্মানিত মানুষকে যদি মহান আল্লাহ বাধ্য করেন, তাহলে কি তার সম্মান থাকে? কোনো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে অনেক সম্মান দিয়ে এনে তারপর যদি তাকে বলা হয় যে, আপনি ঠিক ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে কথা বলবেন। এক মিনিট কম-বেশি করতে পারবেন না। এই এই কথা বলতে হবে। এর বাইরে কিছু বলতে পারবেন না।…
এভাবে বিভিন্ন ব্যাপারে যদি তাকে প্রকৃতিগতভাবেই বাধ্য করা হয় তাহলে প্রধান অতিথির সম্মান কি আর বাকি থাকে? প্রধান অতিথির সামনে বা সম্মানিত ব্যক্তিদের সামনে মূলনীতি পেশ করা যায়। এলাকার কে কেমন, কার সাথে কেমন ব্যবহার করা উত্তম-মন্দ তা তাকে জানানো যায়। কিন্তু তাকে নির্দিষ্ট কোনো কাজের ক্ষেত্রে বাধ্য করা যায় না।
একইভাবে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাও তার এই বিশাল সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে প্রধান অতিথি করে পাঠিয়েছেন। এই মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টির উপর মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এরপর মানুষকে তার দেয়া পথে ও পদ্ধতি অনুসারে চলতে বলেছেন। কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে তাদেরকে বাধ্য করেন নি। এটাই মানুষের জন্য পরীক্ষা। কারা তার রবের এতো নিয়ামত পেয়ে কৃতজ্ঞ হয় আর কারা অকৃতজ্ঞ হয় -এখন এটিই দেখার বিষয়। মানবজাতির মধ্যে যারা এই বিশ্ব ও মহাবিশ্বের এতো নিয়ামত পেয়ে তার প্রতিপালক ও স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ ও শ্রদ্ধাশীল হবে তাদের জন্য পরকালে রয়েছে অফুরন্ত নিয়ামত। আর অকৃতজ্ঞদের জন্য আযাব।
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ
وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ
فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (১৩) وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ (১৪)
অর্থ: “এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৩-১৪)
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার এবং সঠিক পথ বেছে নেয়ার তাওফীক দিন।
আমীন।
“হে নবী আপনি বলুন, হে কাফির সম্প্রদায়। তোমরা যার ইবাদাত কর আমি তারইবাদাত করি না। এবং আমি যার ইবাদাত করি তোমরা তার ইবাদাতকারী নও। আর তোমরা যার ইবাদত করছ আমি তার ‘ইবাদাতকারী হব না। আর আমি যার ইবাদাত করি তোমরা তার ইবাদাতকারী হবে না। তোমাদের জন্য তোমাদের দীন আর আমার জন্য আমার দীন।” (সূরা কাফিরুন ১০৯, আয়াত ০৬)
এবার আসল কথায় আসা যাক। কাউকে কোনো কাজে বাধ্য না করা আর তাকে অন্যায় করতে সুযোগ দেয়া এক কথা নয়।একমাত্র জিন ও মানুষ ছাড়া এই মহাবিশ্বের আসমান, যমীন, পাহাড়, সাগর, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, নিহাড়িকাপুঞ্জসহ সকল সৃষ্টি প্রকৃতিগতভাবেই মহান আল্লাহর পুরোপুরি অনুগত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ
বলেন,
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ.
অর্থ: “তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? অথচ আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, সব সৃষ্টি একমাত্র আল্লাহরই অনুগত হয়ে মুসলিম হয়ে গেছে এবং তাঁর দিকেই সবাই ফিরে যাবে। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৮৩)
এই সকল সৃষ্টির কোনো একটি সামান্যতমও ব্যতিক্রম করে না। মহান আল্লাহর নির্দেশনার বাইরে যায় না। প্রত্যেকটি সৃষ্টি তার জন্য মহান আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া নির্ধারিত নিয়ম ও বিধান অনুযায়ী চলে। নির্দিষ্ট দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করে। ইরশাদ হয়েছে,
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ
الْعَلِيمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ
الْقَدِيمِ. لا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلا اللَّيْلُ
سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.
অর্থ: “সূর্য তার নিজ কক্ষপথে ঘুর্ণয় করে। এটা তার জন্য মহান পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্ধারিত। আর চন্দ্রের জন্য আমি কিছু পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি সুতরাং সে সেই পথে ঘুরে ঘুরে (মাসের শেষ সময়ে) একেবারে ক্ষীনকায় হয়ে যায়। সুর্যের ক্ষমতা নেই চন্দ্রকে ধরার আর রাতও দিবসের আগে চলে যেতে পারবে না। মূলত: প্রত্যেকটি সৃষ্টিই তার নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।” (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৩৮-৪০)
এই সকল সৃষ্টি পরিপূর্ণভাবে একমাত্র আল্লাহর অনুগত। তারা আল্লাহর দাসত্ব মেনে নিয়েছে শর্তহীনভাবে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কোনভাবেই তাদের ক্ষমতা নেই আল্লাহর বিধানে বাইরে যাবার। তারা সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করে এবং প্রশংসা করে। ইরশাদ হয়েছে,
وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَنْ فِي
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهً.
অর্থ: “আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে আছে ইচছায় অথবা অনিচছায়।” (সূরা রা’দ ১৩, আয়াত ১৫)
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ
وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ
وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ.
অর্থ: “তোমরা কি লক্ষ্য করনি যে, বস্তুত ঃ আল্লাহই এক সত্তা যাকে সেজদা করে সকলেই, যারা আছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এবং সেজদা করে সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পাহাড়, পর্বত, বৃক্ষরাজি, চতুষ্পদ জন্তু ও বহুসংখ্যক মানুষ। (সূরা হজ্জ ২২, আয়াত ১৮)
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এটা পরিস্কার হয়ে গেলো যে, মহান আল্লাহ চাইলে পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টির মতো মানুষ ও জিন সম্প্রদায়কেও প্রকৃতিগতভাবেই তার অনুগত ও বাধ্য করতে পারতেন। মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সব মানুষকে মুসলিম হতে বাধ্য করতে পারতেন। তিনি চাইলে সকল মুসলমানকেও তার সকল নিয়মাবলী যথাসময়ে এবং যথাযথভাবে পালন করতে বাধ্য করতে পারতেন। কিন্তু তিনি এটি করেন নি।কিন্তু কেনো এটা করা হয় নি? বিচক্ষণদের জন্য এটিই হচ্ছে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ নিজেই বলেন,
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا
بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ
بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ
لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ
لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَكِنْ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آَتَاكُمْ
فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُمْ
بِمَا كُنْتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ (৪৮)
অর্থঃ “সুতরাং আপনি তাদের মধ্যে ফয়সালা করুন আল্লাহ যা নাযিল করেছে তদনুসারে এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ছেড়ে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছি নির্দিষ্ট শরীয়ত ও নির্দিষ্ট পন্থা। আর যদি আল্লাহ্ চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সাইকে এক জাতি করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তাঁর মাধ্যমে। অতএব নেক কাজের প্রতি ধাবিত হও। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তারপর তিনি তোমাদের অবহিত করবেন সে বিষয়ে যাতে তোমরা মতভেদ করতে।” (সূরা মায়িদাহ ০৫: ৪৮)
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই সমগ্র মহাবিশ্বকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি সুন্দরতমভাবে সৃষ্টি করেছেন মানুষ। অনেক আদর ও মমতায় তিনি তৈরী করেছেন আমাদেরকে। তিনি ইরশাদ করছেন,
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ (৪)
অর্থ: “অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে।” (সূরা তীন ৯৫, আয়াত ০৪)
এই পৃথিবী ও তার সকল সম্পদরাজি এবং তার মধ্যকার সকল উপায় উপকরণ মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র মানুষের জন্য। এই মানুষের জন্যই তিনি সৃষ্টি করেছেন চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র। মানুষের সেবায় তিনি নিয়োজিত করেছেন সকল মাখলুকাতকে। সকল মাখলুকাত ও সৃষ্টির মাঝে তিনি মানুষকে এভাবে করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোচ্চ সম্মানিত। ইরশাদ করেন,
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آَدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي
الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى
كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا (৭০)
অর্থ: “আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিয্ক। আর আমি মানুষকে আমার অনেক সৃষ্টির উপর অনেক মর্যাদা দিয়েছি।” (সূরা ইসরা ১৭, আয়াত ৭০)
এবার চিন্তা করুন। এতো সম্মানিত মানুষকে যদি মহান আল্লাহ বাধ্য করেন, তাহলে কি তার সম্মান থাকে? কোনো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে অনেক সম্মান দিয়ে এনে তারপর যদি তাকে বলা হয় যে, আপনি ঠিক ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে কথা বলবেন। এক মিনিট কম-বেশি করতে পারবেন না। এই এই কথা বলতে হবে। এর বাইরে কিছু বলতে পারবেন না।…
এভাবে বিভিন্ন ব্যাপারে যদি তাকে প্রকৃতিগতভাবেই বাধ্য করা হয় তাহলে প্রধান অতিথির সম্মান কি আর বাকি থাকে? প্রধান অতিথির সামনে বা সম্মানিত ব্যক্তিদের সামনে মূলনীতি পেশ করা যায়। এলাকার কে কেমন, কার সাথে কেমন ব্যবহার করা উত্তম-মন্দ তা তাকে জানানো যায়। কিন্তু তাকে নির্দিষ্ট কোনো কাজের ক্ষেত্রে বাধ্য করা যায় না।
একইভাবে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাও তার এই বিশাল সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে প্রধান অতিথি করে পাঠিয়েছেন। এই মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টির উপর মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এরপর মানুষকে তার দেয়া পথে ও পদ্ধতি অনুসারে চলতে বলেছেন। কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে তাদেরকে বাধ্য করেন নি। এটাই মানুষের জন্য পরীক্ষা। কারা তার রবের এতো নিয়ামত পেয়ে কৃতজ্ঞ হয় আর কারা অকৃতজ্ঞ হয় -এখন এটিই দেখার বিষয়। মানবজাতির মধ্যে যারা এই বিশ্ব ও মহাবিশ্বের এতো নিয়ামত পেয়ে তার প্রতিপালক ও স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ ও শ্রদ্ধাশীল হবে তাদের জন্য পরকালে রয়েছে অফুরন্ত নিয়ামত। আর অকৃতজ্ঞদের জন্য আযাব।
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ
وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ
فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (১৩) وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ (১৪)
অর্থ: “এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৩-১৪)
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার এবং সঠিক পথ বেছে নেয়ার তাওফীক দিন।
আমীন।
খলিফা উমর রাযিআল্লাহু আনহু এর রাজনৈতিক দর্শন
মোমের আলোয় কাজ করছিলেন খলিফা উমর রাযিআল্লাহু আনহু । এমন সময় সেখানে
আসলেন তার দুই আত্মীয় । খলিফা তাড়াতাড়ি ফুঁ দিয়ে মোমবাতিটি নিভিয়ে
দিলেন । অন্য আরেকটি মোমবাতি ধরিয়ে অতিথিদের বসতে দিয়ে তাদের খোজখবর
নিলেন । কৌতুহল চাপতে না পেরে একজন জানতে চাইলেন ,
আমাদের দেখে কেন আপনি আগের মোমবাতি নেভালেন আর নতুন একটি জ্বালালেন ? খলিফা জবাব দিলেন : আগের মোমবাতি ছিল রাষ্ট্রের সম্পত্তি থেকে কেনা । তোমরা যেহেতু আমার আত্মীয় , তাই তোমাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত অনেক আলাপ হবে । আমার নিজের কাজে জনগণের আমানত থেকে আমি কিছু খরচ করতে পারি না । তাহলে আল্লাহর দরবারে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে । তাই নিজের টাকায় কেনা মোমবাতিটি তোমাদের দেখে জ্বালালাম । এই জবাবে আত্মীয়রা হতভম্ব হলেন । তারা এসেছিলেন আত্মীয়তার খাতিরে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়া যায় কি না, সেই অনুরোধ করতে । কিন্তু সামান্য মোমবাতি নিয়ে খলিফার এত বিবেচনা ও সতর্কতা দেখে নিজেদের প্রস্তাব জানাতে তারা আর সাহসই করলেন না ।
আরেকবার খলিফার কাছে এক লোক সুবিধা চায় । খলিফার সামনে রাখা কিছু কাঠে তখন আগুন জ্বলছিল। খলিফা বললেন , ঠিক আছে । তুমি এই আগুনের ভিতর তোমার হাত কিছু সময়ের জন্য রাখো ; তারপর তোমার অনুরোধ আমি বিবেচনা করবো । লোকটি ভয় পেয়ে বললো , হে খলিফা ; এই আগুনে হাত ঢুকালে আমার হাত তো জ্বলে যাবে । খলিফা বললেন , তুমি দুনিয়ার এই সামান্য আগুনকে ভয় পাচ্ছ অথচ আমাকে তুমি দোযখের অনন্ত আগুনের ভিতরে নিয়ে যেতে চাও ? তদবিরকারী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে যায়।
আমাদের দেখে কেন আপনি আগের মোমবাতি নেভালেন আর নতুন একটি জ্বালালেন ? খলিফা জবাব দিলেন : আগের মোমবাতি ছিল রাষ্ট্রের সম্পত্তি থেকে কেনা । তোমরা যেহেতু আমার আত্মীয় , তাই তোমাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত অনেক আলাপ হবে । আমার নিজের কাজে জনগণের আমানত থেকে আমি কিছু খরচ করতে পারি না । তাহলে আল্লাহর দরবারে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে । তাই নিজের টাকায় কেনা মোমবাতিটি তোমাদের দেখে জ্বালালাম । এই জবাবে আত্মীয়রা হতভম্ব হলেন । তারা এসেছিলেন আত্মীয়তার খাতিরে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়া যায় কি না, সেই অনুরোধ করতে । কিন্তু সামান্য মোমবাতি নিয়ে খলিফার এত বিবেচনা ও সতর্কতা দেখে নিজেদের প্রস্তাব জানাতে তারা আর সাহসই করলেন না ।
আরেকবার খলিফার কাছে এক লোক সুবিধা চায় । খলিফার সামনে রাখা কিছু কাঠে তখন আগুন জ্বলছিল। খলিফা বললেন , ঠিক আছে । তুমি এই আগুনের ভিতর তোমার হাত কিছু সময়ের জন্য রাখো ; তারপর তোমার অনুরোধ আমি বিবেচনা করবো । লোকটি ভয় পেয়ে বললো , হে খলিফা ; এই আগুনে হাত ঢুকালে আমার হাত তো জ্বলে যাবে । খলিফা বললেন , তুমি দুনিয়ার এই সামান্য আগুনকে ভয় পাচ্ছ অথচ আমাকে তুমি দোযখের অনন্ত আগুনের ভিতরে নিয়ে যেতে চাও ? তদবিরকারী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে যায়।
জান্নাতীদেরকে আল্লাহ পবিত্রা স্ত্রী ও হুরদের সাথে বিয়ে দেবেনঃ
☞ ‘তারা সামনা-সামনিভাবে সাজানো সারি সারি আসনের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে
এবং আমি তাদের সাথে সুনয়না হুরদের বিবাহ দেবো।’ (সূরা তুর: ২০)
☞ ‘(এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে) তাদের জন্য সচ্চরিত্রবান ও সুদর্শন স্ত্রীগণ।’ (সূরা আর-রাহমান: ৭০)
☞ “আমি জান্নাতী নারীদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদেরকে
চিরকুমারী, কামিনী ও সমবয়স্কা বানিয়েছি।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৩৫-৩৮)
☞ ঐ সমস্ত হুর এবং স্ত্রীগণ শুধু কুমারীই হবে না বরং এমন অবস্থায় থাকবে
যে, জান্নাতীদের স্পর্শের পূর্বে কোনো মানুষ অথবা জ্বীন তাদেরকে স্পর্শ করে
নি বা দেখেও নি। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন নিজেই বলেনঃ তাদেরকে
(জান্নাতীদের) পূর্বে কোনো মানুষ অথবা জ্বীন স্পর্শ করে নি।’ (সূরা
আর-রাহমান: ৫৬)
☞ হুরেরা হবে আবরণে রক্ষিত উজ্জ্বল মণি-মুক্তার মতো সুন্দরী। আল্লাহ বলেন:
“হুরের উদাহরণ হলো, আবরণে রক্ষিত মুক্তার মতো সুন্দর ও উজ্জ্বল এবং
আয়তলোচনা। ”(সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৩)
☞ “তাদের (হুরদের) চোখ সর্বদাই অবনত (পবিত্রা যারা অন্যের দিকে তাকায় না),
সুন্দর চোখ বিশিষ্ট এবং তারা যেন ডিমের আবরণের ভেতর সুপ্ত উজ্জ্বল।” (সূরা
সাফ্ফাত:৪৮- ৪৯)
☞ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতীগণের
স্ত্রীদের মধ্যে থেকে কোনো একজন স্ত্রী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি মেরো দেখতো
তবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে যেতো এবং গোটা পৃথিবী
সুগন্ধে ভরে যেতো। তার মাথার উড়নাটিও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর
চেয়ে দামী।’ (বুখারী, ২৭৯৬)
☞ অন্য বর্ণনায় এসেছে, হুরেরা অত্যন্ত উজ্জ্বল সুন্দরী, রূপবতী,
লাবণ্যময়ী, সুন্দর ও বড় বড় চোখের অধিকারিণী হবে, কাপড়ের মধ্য দিয়ে
তাদের হাড়ের ভেতরের মজ্জা দেখা যাবে, তাদের দেহ আয়নার মতো স্বচ্ছ হবে এবং
যে কেউ নিজের চেহারা তাতে দেখতে পাবে। আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মোমিনকে জান্নাতে ১শত
নারীর সাথে যৌনমিলনের শক্তি দেয়া হবে। (মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৭১)
☞ সোনার খাটে মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে বসবেঃ “জান্নাতীরা সোনার খাটে
পরস্পর মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে আরামের সাথে আলাপচারিতা করবে।” (সূরা
ওয়াকি‘আহ্ : ১৫-১৬)
☞ “তারা এবং তাদের স্ত্রীরা ছায়ার মধ্যে খাটে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে
তাদের জন্য রয়েছে ফল-মুল এবং তারা যা চাবে সবই ।” সূরা ইয়াসিন-৫৬)
☞ হুরদের প্রাণ মাতানো সংগীতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, জান্নাতের মধ্যে হুরদের একটি সমষ্টি থাকবে, যারা এমন মধুর সুরে গান
গাবে, আল্লাহর কোন সৃষ্টি এত সুন্দর কণ্ঠের গান আর কোনো দিন শোনে নি। তারা এ
বলে গাইবে:
‘আমরা চিরস্থায়ী, কোন দিন খতম হবো না,
আমরা চিরসুখী, কোনদিন দুঃখী হবো না।
আমরা চিরসন্তুষ্ট, কোন দিন অসন্তুষ্ট হবো না,
সুসংবাদ, আমরা যাদের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য। (তিরমিযী, ২৫৬৪)
আপনি কি এই জান্নাত পেতে চান…? পেতে চাইলে আপনাকে আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
আল্লাহকে ভয় করার অর্থ সকল প্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং তার আদেশ
অনুযায়ী চলতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের
প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য এমন উদ্যান সমূহ রয়েছে যার নীচ দিয়ে
ঝর্ণাধারা প্রবাহমান। আর সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। সেখানে তাদের
জন্য আরও আছে পবিত্রা স্ত্রীগণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। (সুরা আল ইমরানঃ ১৫)
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)
একদিন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে কাঁদছেন।
রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হোরায়রা তুমি কেন কাঁদছ? আবু হোরায়রা
বললেন, আমার মা আমাকে মেরেছেন। রাসুল (সাঃ) বললেন, কেন তুমিকি কোন বেয়াদবি
করেছ? আবু হোরায়রা বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবি করিনি। আপনার দরবার হতে বাড়ি
যেতেআমার রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি
আপনার কথা বললাম। আর আপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারধর করল আর বলল, হয়ত
আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ (সাঃ) এর দরবার ছাড়বি।আমি
বললাম, ও আমার মা। তুমি বয়স্ক মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত শক্তি
দিয়ে মারতে থাকো। মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। তবুও আমি
আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না। তখন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? আমার তো এখানে কিছুই করার নেই। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন, হে রাসূল (সাঃ) আমি আমার মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই। রাসুল (সাঃ) বললেন, তাহলে কেন এসেছ? আবু হোরায়রা বললেন, আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার
মায়ের জন্য দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন। আর তখনই সাথে সাথে রাসুল (সাঃ) হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, হে
আল্লাহ! আমি দোয়া করি আপনি আবু হোরায়রার আম্মাকে হেদায়েত করে দেন।” রাসুল (সাঃ) দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন
থেকে কয়েকজন লোক আবু হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো, হে আবু হোরায়রা!
তুমি দৌড়াচ্ছ কেন?তখন আবু হোরায়রা বললেন, ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার জামা ছেড়ে দাও।আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দৌড়াইয়া বাড়িতে গিয়ে দেখতে আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির দোয়া
আগে পৌঁছে গেছে। হযরত আবু হোরায়রা দরজায় ধাক্কাতে লাগলো। ভিতর থেকে তার
মা যখন দরজা খুললো তখন আবু হোরায়রা দেখলেন তার মার সাদা চুল বেয়ে বেয়ে
পানি পড়ছে।তখন মা আমাকে বললেন, হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড়
অনুতপ্ত হয়েছি,অনুশোচনা করেছি। মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ
জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায় পড়েছি তোমাকে মেরে।হে
আবু হোরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল (সাঃ) এর দরবারে
নিয়ে চল।
আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মা সেখানেই কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। পিতা মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো,নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। সুবাহান আল্লাহ
আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মা সেখানেই কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। পিতা মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো,নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। সুবাহান আল্লাহ
[তিরমিজি ]
চরিত্র
মানুষের জীবন সব সময়ই একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে। শয়তান
মানুষেল চারপাশ দিয়ে সবসময় আক্রমনের চেষ্টা করে। তাই মানুষের চরিত্র এমন
হতে হবে যা সকল প্রকার অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। উন্নত চরিত্রের
অধিকারী হলেও চলবেনা। সেই চরিত্রকে কাজে লাগাতে হবে অর্থাৎ দেশ ও জাতিও
যেন সেই চরিত্রের অনুযায়ী হয়।
মানুষের তৎপরতা যত বৃদ্ধি পায়, যত অধিক গুরুত্ব অর্জন করে, সেখানে শয়তানের হস্তক্ষেপও ততই ব্যাপকতর হতে থাকে। এদিক দিয়ে বর্তমান যুগ উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টের অধিকারী। এ যুগে একদিকে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও স্বার্থপূজারী সভ্যতা আমাদের জাতির নৈতিক পতনকে চরম পর্যায়ে উপনীত করেছে, অন্যদিকে চলছে সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদী চিন্তার হামলা। এ হামলা আমাদের জাতির মৌলিক ঈমান-আকীদার মধ্যে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ইসলামের সাথে জাতির গভীর প্রেম-প্রীতিময় সম্পর্কের ভিত্তি নড়ে উঠেছে। বিপর্যয় ও অনিষ্টকারিতার ‘সিপাহসালার’ শয়তান যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল হুবহু তারই চিত্র যেন আজ ফুটে উঠেছে। শয়তান বলেছিলঃ আমি (হামলা করার জন্য) এদের (মানব জাতির ) সামনে থেকে আসবো, পিছন থেকে আসবো, ডান দিক থেকে আসবো, বাম দিক থেকে আসবো।(সুরা আরাফ-১৭)
মানুষের তৎপরতা যত বৃদ্ধি পায়, যত অধিক গুরুত্ব অর্জন করে, সেখানে শয়তানের হস্তক্ষেপও ততই ব্যাপকতর হতে থাকে। এদিক দিয়ে বর্তমান যুগ উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টের অধিকারী। এ যুগে একদিকে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও স্বার্থপূজারী সভ্যতা আমাদের জাতির নৈতিক পতনকে চরম পর্যায়ে উপনীত করেছে, অন্যদিকে চলছে সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদী চিন্তার হামলা। এ হামলা আমাদের জাতির মৌলিক ঈমান-আকীদার মধ্যে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ইসলামের সাথে জাতির গভীর প্রেম-প্রীতিময় সম্পর্কের ভিত্তি নড়ে উঠেছে। বিপর্যয় ও অনিষ্টকারিতার ‘সিপাহসালার’ শয়তান যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল হুবহু তারই চিত্র যেন আজ ফুটে উঠেছে। শয়তান বলেছিলঃ আমি (হামলা করার জন্য) এদের (মানব জাতির ) সামনে থেকে আসবো, পিছন থেকে আসবো, ডান দিক থেকে আসবো, বাম দিক থেকে আসবো।(সুরা আরাফ-১৭)
এ অবস্থায় আমাদের অনেক কল্যাণকামী বন্ধূ দুনিয়ার ঝামেলা থেকে সরে এসে
সংসারের একান্তে বসে কেবল নিজের মুসলমানিত্বটুকু বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা
চালাবার উপদেশ দান করে থাকেন। অবশ্য এ অবস্থার মধ্যে অবস্থান করা মামুলী
ব্যাপার নয়। সাধারণ অবস্থায় প্রত্যেক সৎ ব্যক্তি নৈতিকতার আদর্শকে কায়েম
রাখে। কিন্তু নৈতিক উচ্ছৃঙ্খলার প্রবল বাত্যা পরিবেষ্টিত হয়ে উন্নত নৈতিক
বৃত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক
যদি মহামারি আক্রান্ত এলাকা থেকে দুরে অবস্থান করে নিজেদের
স্বাস্থ্যোন্নতির কাজে ব্যাপৃত থাকে এবং নিশ্চিন্তে মহামারিকে নৈতিক
মৃত্যুর বিভীষিকা চালিয়ে যাবার ব্যাপক অনুমতি দান করে, তাহলে আমাদের মতে এর
চাইতে বড় স্বার্থপরতা আর হতে পারে না। মাজারের নিকট যে সমস্ত মূল্যবান
প্রদীপ ও স্বর্ণনির্মিত বাতিদান অযথা আলোক বিচ্ছূরন করে; অথচ তাদের
সন্নিকটে বনে-জঙ্গলে মানুষের কাফেলা পথভ্রষ্ট হয়ে দস্যুহস্তে লূন্ঠিত হয়,
সেই প্রদীপ ও বাতিদানের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব যেমন সমান মূল্যহীন, ঠিক তেমনি
যে ঈমান, ইসলাম ও তাকওয়া চতুষ্পার্শের পরিবেশকে আলোকিত করার জন্য
কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিবর্তে বিরোধী শক্তির ভয়ে মসজিদে আশ্রয় খুজে
ফেরে, তাও হৃদয়-মনের জন্য নিছক স্বর্ণালংকার বৈ আর কিছুই নয়। চরিত্রের যে
‘মূলধন’কে ক্ষতির আশংকায় হামেশা সিন্দুকের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় এবং
যা হামেশা অনুৎপাদক (productive) অবস্থায় বিরাজিত থাকে, সমাজ জীবনের জন্যে
তার থাকা না থাকা সমান। মুসলমান নারী-পুরুষ এবং মুসলিম দলের নিকট চরিত্র ও
ঈমানের কিছু ‘মূলধন’ থাকলে তাকে বাজারে আবর্তন (Circulation)করার জন্য ছেড়ে
দেওয়া উচিত। তারপর মূলধন নিয়োগকারীদের মধ্যে যোগ্যতা থাকলে সে মূলধন লাভসহ
ফিরে আসবে, আর অযোগ্য হলে লাভ তো দূরের কথা আসল পুঁজিও মারা পড়বে। কিন্তু
বাজারে আবর্তিত হতে থাকার মধ্যেই পুঁজির স্বার্থকতা। অন্যথায় যত অধিক
পরিমাণ পুঁজিই জমা করা হোক না কেন তা পুরোপুরি ব্যর্থ হতে বাধ্য।
-চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
-চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
” মানুষ ঘুমালে তার আত্মা কি করে????”
রাসুল সা: এর জলিলুল কদর সাহবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা: বলেছেন, মানুষ যখন ঘুমায়, তখন তার আত্মা
ঊর্ধ্ব আকাশে চলে যায়। অতঃপর তাকে মহান আল্লাহর আরশের কাছে সিজদা করার
নির্দেশ দেয়া হয়। যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ঘুমায় তার আত্মা আল্লাহর
আরশের কাছেই সিজদা করে। আর যে ব্যক্তি অপবিত্র অবস্থায় ঘুমায়, তার আত্মা
আরশ থেকে দূরে সিজদা করে।
(বায়হাকী, হাদিসটি ইমাম বুখারী তাঁর আত- তারীখুল কাবীর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন)।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ঘুমায় তার মাথার কাছে
একজন ফেরেশতা রাতযাপন করে এবং ঐ ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার
জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। ফেরেশতা বলতে থাকে, “হে
আল্লাহ! তুমি তোমার এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা সে পবিত্র অবস্থায়
রাতযাপন করছে। (তাবরানী ও বায়হাকী।)
অতএব, আসুন! আমরা পবিত্র অবস্থায় ঘুমাই যাতে আমাদের আত্মা আল্লাহর আরশের কাছেই সিজদা দিতে পারে এবং ফেরেশতারা যেন আমাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে।
অতএব, আসুন! আমরা পবিত্র অবস্থায় ঘুমাই যাতে আমাদের আত্মা আল্লাহর আরশের কাছেই সিজদা দিতে পারে এবং ফেরেশতারা যেন আমাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে।
Tuesday, 2 June 2015
ফেজবুক ও আমার বন্ধু রাসেদ
রাসেদ আমার অনেক প্রিয় একজন বন্ধু। পিতা মাতার একমাত্র সন্তান।সে এখন লেখা
পড়া শেষ করে চাকরী নিয়ে গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতে থাকে।অবশেষে পিতা-মাতার চাহিদা
মোতাবেক বিবাহ করে রাসেদ।বন্ধুটি এখন আল্লাহ মেহেরবানীতে ০৩ সন্তানের জনক।
যদিও আমি এখনো অবিবাহিতদের সাথে আছি।সন্তানদের মানুষ করার জন্য স্ত্রী ও
সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার পরামর্শক্রমে ঢাকাতে থাকে ।ভালই কাটছিল তাদের
সাংসারিক জীবন।আমি মাঝে মাঝে তাদের বাসায় যেতাম।সত্যিই তাদের মধ্যে এত সুন্দর ভালবাসা ও আন্তরিকতা দেখতাম, যা আমাকে অনেক প্রেরণা দিতো।
হঠাৎ তাদের সাংসারিক জীবনে অশান্তি নেমে আসে।বন্ধুটি কেমন যেন টেনশন টেনশন নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।কিছুই তার নিকট ভাল লাগেনা।আমি তার নিকট একান্তভাবে কি সমস্যা ? তা জানতে চাইতাম। কিন্তু আমার নিকট থেকে সব সময় এড়িয়ে যায়। আমি বন্ধুর প্রিয় হওয়ার কারণে তার স্ত্রী একদিন আমাকে বন্ধুর সমস্যা জানালেন।পরক্ষণে আমি বন্ধুর নিকট হতে জানতে চাইলে ও প্রশ্ন করলে দেখতে পেতাম যে না সবই ঠিক আছে।কিছু কিছু সময় ভাবতাম ভাবী কি তাহলে মিথ্যা বলছে ! (আল্লাহ ক্ষমা করুক) অবশেষে জানতে পারলাম যে ফেজবুক আজ আমার বন্ধুর এই অবস্থা তৈরী করেছে।বন্ধুটি আগে ফেজবুক তেমন বুঝতো না আর এখন মাশাআল্লাহ ভাল জানে ও বুঝে।ফেজবুকের মাধ্যমে এক মেয়ে বন্ধুর সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে নিয়মিত বন্ধুটি ব্যস্ত থাকতো চ্যাটে ও কথাবার্তায়।সারাদিন সারারাত যখন তখন ঐ মেয়েটির সাথে আলাপ আলোচনা চলতে থাকে।এদিকে তার স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি ভালবাসা এবং চাকরী বা অন্যান্য কাজে তেমন আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছেনা।বন্ধুটির স্ত্রী অনেক চেষ্টা চালিযে যাচ্ছে এই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে।নিয়মিত আল্লাহকে বলা, দোয়া করা ও কান্নাকাটি করা ছাড়া তার স্ত্রী আর কিছু করছেনা। এমনকি সামাজিকতার জন্য কাহারো নিকট বিষয়টি বলাও যাচ্ছেনা।দুঃখ আর কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে রাসেদের পরিবারটি।
এই বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মান অভিমান চলতে থাকে।উভয়ের খাওয়া দাওয়া বন্ধ, এমনকি মাঝে মাঝে যোগাযোগও বন্ধ থাকে।সন্তানরাও বাবার স্নেহ ভালবাসা পাচ্ছেনা।আমার নিকট তাদের এই সমস্যা খুব মানসিক ভাবে কষ্ট দিচ্ছে।
আর ভাবছি তাহলে আমার এই প্রিয় বন্ধুটির সংসারে চরম অশান্তির পিছনে দায়ী কি ঐ মেয়েটি না ফেজবুক ? আমি দোয়া করি মহান আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের সংসারে আগেরমত ভালবাসা ও শান্তি ফিরিয়ে দেন।আর জানিনা আমার এ লেখা বন্ধুটির পরিবর্তনে সহায়ক হবে কিনা! তবে আশা রাখি আমরা যারা ফেজবুক চালাই তাদের কিছুটা শিক্ষাঅর্জন করার সুযোগ হবে ইনশাআল্লাহ! শয়তানের কুমন্ত্রনা হতে মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এবং সহজ, সরল ও সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন (আমীন ) আর সকলের নিকট আমার এই প্রিয় বন্ধুটির জন্য দোয়া চাই
হঠাৎ তাদের সাংসারিক জীবনে অশান্তি নেমে আসে।বন্ধুটি কেমন যেন টেনশন টেনশন নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।কিছুই তার নিকট ভাল লাগেনা।আমি তার নিকট একান্তভাবে কি সমস্যা ? তা জানতে চাইতাম। কিন্তু আমার নিকট থেকে সব সময় এড়িয়ে যায়। আমি বন্ধুর প্রিয় হওয়ার কারণে তার স্ত্রী একদিন আমাকে বন্ধুর সমস্যা জানালেন।পরক্ষণে আমি বন্ধুর নিকট হতে জানতে চাইলে ও প্রশ্ন করলে দেখতে পেতাম যে না সবই ঠিক আছে।কিছু কিছু সময় ভাবতাম ভাবী কি তাহলে মিথ্যা বলছে ! (আল্লাহ ক্ষমা করুক) অবশেষে জানতে পারলাম যে ফেজবুক আজ আমার বন্ধুর এই অবস্থা তৈরী করেছে।বন্ধুটি আগে ফেজবুক তেমন বুঝতো না আর এখন মাশাআল্লাহ ভাল জানে ও বুঝে।ফেজবুকের মাধ্যমে এক মেয়ে বন্ধুর সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে নিয়মিত বন্ধুটি ব্যস্ত থাকতো চ্যাটে ও কথাবার্তায়।সারাদিন সারারাত যখন তখন ঐ মেয়েটির সাথে আলাপ আলোচনা চলতে থাকে।এদিকে তার স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি ভালবাসা এবং চাকরী বা অন্যান্য কাজে তেমন আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছেনা।বন্ধুটির স্ত্রী অনেক চেষ্টা চালিযে যাচ্ছে এই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে।নিয়মিত আল্লাহকে বলা, দোয়া করা ও কান্নাকাটি করা ছাড়া তার স্ত্রী আর কিছু করছেনা। এমনকি সামাজিকতার জন্য কাহারো নিকট বিষয়টি বলাও যাচ্ছেনা।দুঃখ আর কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে রাসেদের পরিবারটি।
এই বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মান অভিমান চলতে থাকে।উভয়ের খাওয়া দাওয়া বন্ধ, এমনকি মাঝে মাঝে যোগাযোগও বন্ধ থাকে।সন্তানরাও বাবার স্নেহ ভালবাসা পাচ্ছেনা।আমার নিকট তাদের এই সমস্যা খুব মানসিক ভাবে কষ্ট দিচ্ছে।
আর ভাবছি তাহলে আমার এই প্রিয় বন্ধুটির সংসারে চরম অশান্তির পিছনে দায়ী কি ঐ মেয়েটি না ফেজবুক ? আমি দোয়া করি মহান আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের সংসারে আগেরমত ভালবাসা ও শান্তি ফিরিয়ে দেন।আর জানিনা আমার এ লেখা বন্ধুটির পরিবর্তনে সহায়ক হবে কিনা! তবে আশা রাখি আমরা যারা ফেজবুক চালাই তাদের কিছুটা শিক্ষাঅর্জন করার সুযোগ হবে ইনশাআল্লাহ! শয়তানের কুমন্ত্রনা হতে মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এবং সহজ, সরল ও সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন (আমীন ) আর সকলের নিকট আমার এই প্রিয় বন্ধুটির জন্য দোয়া চাই
মানুষ হতে চাইঃ
মানুষ হয়ে জন্ম নিলাম মায়ের সবুজ কোলে-
হাজার রঙের স্বপ্নঘুড়ি মনের মাঝে দোলে।
হঠাৎ করে আবার যেন পথ ভুলে না যাই-
তাইতো আমি নতুন করে মানুষ হতে চাই ।।
হাজার রঙের স্বপ্নঘুড়ি মনের মাঝে দোলে।
হঠাৎ করে আবার যেন পথ ভুলে না যাই-
তাইতো আমি নতুন করে মানুষ হতে চাই ।।
আমার একটি হৃদয় আছে আবেগভরা নদী-
এই নদীতে পাপের কালো ময়লা জমে যদি-
বদলে যাবে তখন আহা জীবন তুলির রঙ
দেখবে সবে আমার ভেতর মানবতা নাই ।।
আমার দু’টি নয়ন আছে পূর্ণিমারই আলো-
জেনে বুঝে আঁধারকেও যখন বলি ভালো-
সত্যকেও মিথ্যা ভেবে তৃপ্তি যদি পাই-
কেমন করে তখন আমি মানুষ রবো ভাই ।।
এই নদীতে পাপের কালো ময়লা জমে যদি-
বদলে যাবে তখন আহা জীবন তুলির রঙ
দেখবে সবে আমার ভেতর মানবতা নাই ।।
আমার দু’টি নয়ন আছে পূর্ণিমারই আলো-
জেনে বুঝে আঁধারকেও যখন বলি ভালো-
সত্যকেও মিথ্যা ভেবে তৃপ্তি যদি পাই-
কেমন করে তখন আমি মানুষ রবো ভাই ।।
Monday, 1 June 2015
এই লেখা হতে আমাদের শিক্ষা কি হতে পারে ?
এক গ্লাস পানিতে এক ফোটা লেবুর রস দিলে পুরো পানিতে এক রকম টক স্বাদ
অনুভূত হয়। শত চেষ্টা করেও পানির আগের সুমিষ্ট ভাব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।
বিশ্বাসের মাঝে অবিশ্বাসের ফোটা লেবুর মতো পুরো সম্পর্কটাকে টক করে । যার
পরিণতি খুব কষ্টের। পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায় না। অগাধ ভালবাসা সাময়িক লীন
করলেও জুড়ে দেয়া ভাঙা কাঁচের মতো দাগ থেকে যায়।
জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি। চলার পথে অবিশ্বাস করার মতো কাউকে খুজে পাইনি। কিন্তু বিশ্বাস ধরে রাখতে সবাই পারেনি। আর বিশ্বাস করা অপরাধ নয় বরং ভাঙা অপরাধ। যেহেতু অপরাধী কখনো ছিলাম না তাই আর বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে অংক কষাকষি করতে চাইনা।
মিথ্যা সাময়িক সুখ দিতে পারলেও রাতটা নিদ্রাহীন পার করতেই হবে।
আর সত্য সব-সময় সুন্দর।
জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি। চলার পথে অবিশ্বাস করার মতো কাউকে খুজে পাইনি। কিন্তু বিশ্বাস ধরে রাখতে সবাই পারেনি। আর বিশ্বাস করা অপরাধ নয় বরং ভাঙা অপরাধ। যেহেতু অপরাধী কখনো ছিলাম না তাই আর বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে অংক কষাকষি করতে চাইনা।
মিথ্যা সাময়িক সুখ দিতে পারলেও রাতটা নিদ্রাহীন পার করতেই হবে।
আর সত্য সব-সময় সুন্দর।
বড়ই দূর্ভাগা এ জাতি !
কেউ কি বলতে পারবেন এই সমাজের কচি বয়সে শিশুগুলো বই
নাড়াচড়া না করে গ্লাস নাড়াচড়া করে কেন?
কারও শুনার ইচ্ছে নেই বুঝি ।
এদের অনেকই জানেনা তাদের মা-বাবা কে ?
অনেকে আছে বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে।
আবার কেউবা হতবাগা বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর কারনে ঘরছাড়া।
নাড়াচড়া না করে গ্লাস নাড়াচড়া করে কেন?
কারও শুনার ইচ্ছে নেই বুঝি ।
এদের অনেকই জানেনা তাদের মা-বাবা কে ?
অনেকে আছে বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে।
আবার কেউবা হতবাগা বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর কারনে ঘরছাড়া।
আমাদের দেশের ধনীরা যদি এদের একেকজনের দায়িত্ব গ্রহন করত
তবে তাদের এভাবে খাবার জোগাড় করতে হতনা।
তবে হাঁ ইসলামের যাকাত বিধানের উপর যদি সবাই আমল করত
তাহলে দারিদ্রতা নিঃসন্দেহে কমে আসত।
একটা সমাজ ঠিক তখনই ব্যর্থ হয়
যখন তাদের শিশুদের কাজ করে খেতে হয়।
তাদের শিশুরা খাবারের জন্য যুদ্ধকরে।
বড়ই দূর্ভাগা এ জাতি!
তবে তাদের এভাবে খাবার জোগাড় করতে হতনা।
তবে হাঁ ইসলামের যাকাত বিধানের উপর যদি সবাই আমল করত
তাহলে দারিদ্রতা নিঃসন্দেহে কমে আসত।
একটা সমাজ ঠিক তখনই ব্যর্থ হয়
যখন তাদের শিশুদের কাজ করে খেতে হয়।
তাদের শিশুরা খাবারের জন্য যুদ্ধকরে।
বড়ই দূর্ভাগা এ জাতি!
” জীবন সংগ্রাম “
সারাদিন ঘুরেও কোন কাজ জোগাড় করতে পারছেনা মামুন মিয়া।
ঘরে একমুঠো ও চাল নেই। বউ ছেলে নিয়ে সারাদিন উপোষ থাকে সে।
সে ভাবে যে, তাকে কিছু করতেই হবে। একদিন রাতের আঁধারে বেরিয়ে পরে চুরি করতে। কারো বাড়ির টিউবওয়েলের লোহার মাথা, কারো বাড়ির আঙ্গিনায় পরে থাকা বিভিন্ন জিনিস। যা পেয়েছে তাই চুরি করেছে সে।
ঘরে একমুঠো ও চাল নেই। বউ ছেলে নিয়ে সারাদিন উপোষ থাকে সে।
সে ভাবে যে, তাকে কিছু করতেই হবে। একদিন রাতের আঁধারে বেরিয়ে পরে চুরি করতে। কারো বাড়ির টিউবওয়েলের লোহার মাথা, কারো বাড়ির আঙ্গিনায় পরে থাকা বিভিন্ন জিনিস। যা পেয়েছে তাই চুরি করেছে সে।
স্বামীরর খোঁজ না পেয়ে কাঁদতে লেগেছে রহিমা বেগম। হঠাৎ মামুন আসলো। সাথে
বাজার করে এনেছে অনেককিছু। পকেটে টাকা ও আছে। রহিমা জিজ্ঞাসা করতেই বলে
যে, কাজ পেয়েছে।
এভাবেই চুরি করে বেশ কিছুদিন কেটে যায় মামুনের। হঠাৎ গাঁজায় আসক্ত হয় সে। মামুনের হাতে যখন কোন টাকা না থাকে তখন সে বউকে অত্যাচার করে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য। এভাবে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে রহিমা পালিয়ে যায় বাপের বাড়ি। ফেলে রেখে যায় তাদের দাম্পত্য জীবনের স্মৃতি তাদের একমাত্র ছেলে রাশেদকে। রহিমাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সে আর ফিরেনি।
কয়েকবছর কেটে যায়। মামুন আবার বিয়ে করে। আবারো একটা ছেলে হয়।
গাঁজার নেশায় মামুনকে জীবনের শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। একদিন মারা যায় সে। ঘরে থাকে তার দ্বিতীয় বিয়ে করা স্ত্রী, সন্তান ও রাশেদ। দুঃখ, কষ্ট আর মানুষের সহযোগীতায় কোন রকমে বেঁচে আছে তার স্ত্রী ও সন্তান।
তাদের এ অসহায়ত্বের জন্য দায়ী কে জানেন? আমাদের এই নিষ্ঠুর সমাজ ব্যবস্থা।আমরা তো চোর পেলেই যে যার মত করে মারার চেষ্টা করি। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছি কী যে, কেন আজ তারা চোর??
না, আমাদের সেসব ভাবার সময় কই? আমরা তো সুখেই আছি। আশে পাশে কে কেমন আছে তা জেনে আমরা কী করবো?
কিন্তু আমরা কী কখনো ভেবে দেখেছি যে, আমাদের একটু সামাজিক সচেতনতায় পারে কিছু দুঃখী মানুষ কে সুন্দর জীবন দিতে। তাদের দারিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে।
এভাবেই চুরি করে বেশ কিছুদিন কেটে যায় মামুনের। হঠাৎ গাঁজায় আসক্ত হয় সে। মামুনের হাতে যখন কোন টাকা না থাকে তখন সে বউকে অত্যাচার করে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য। এভাবে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে রহিমা পালিয়ে যায় বাপের বাড়ি। ফেলে রেখে যায় তাদের দাম্পত্য জীবনের স্মৃতি তাদের একমাত্র ছেলে রাশেদকে। রহিমাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সে আর ফিরেনি।
কয়েকবছর কেটে যায়। মামুন আবার বিয়ে করে। আবারো একটা ছেলে হয়।
গাঁজার নেশায় মামুনকে জীবনের শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। একদিন মারা যায় সে। ঘরে থাকে তার দ্বিতীয় বিয়ে করা স্ত্রী, সন্তান ও রাশেদ। দুঃখ, কষ্ট আর মানুষের সহযোগীতায় কোন রকমে বেঁচে আছে তার স্ত্রী ও সন্তান।
তাদের এ অসহায়ত্বের জন্য দায়ী কে জানেন? আমাদের এই নিষ্ঠুর সমাজ ব্যবস্থা।আমরা তো চোর পেলেই যে যার মত করে মারার চেষ্টা করি। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছি কী যে, কেন আজ তারা চোর??
না, আমাদের সেসব ভাবার সময় কই? আমরা তো সুখেই আছি। আশে পাশে কে কেমন আছে তা জেনে আমরা কী করবো?
কিন্তু আমরা কী কখনো ভেবে দেখেছি যে, আমাদের একটু সামাজিক সচেতনতায় পারে কিছু দুঃখী মানুষ কে সুন্দর জীবন দিতে। তাদের দারিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে।
'''একটি শিক্ষণীয় পোস্ট ''''
মেয়ে ঝকঝকে নতুন একটা iPhone
কিনলো। শুধু তাই না, সাথে একটি
স্ক্রিন প্রটেকটর এবং সুন্দর একটা কাভারও
কিনলো। সে তার বাবাকে ফোনটা
দেখালো, এরপর তাদের মধ্যে কী কথোপকথন হল
পড়ুনঃ
বাবাঃ খুব সুন্দর মোবাইল এটি। কত
দিয়ে কিনলে?
মেয়েঃ এই তো ৫০,০০০ টাকা দিয়ে
ফোন, ১২০০ টাকা দিয়ে কাভার আর
২০০ টাকা দিয়ে স্ক্রিন প্রটেকটর।
.
বাবাঃ আচ্ছা তুমি কেন কাভার এবং
স্ক্রিন প্রটেকটরটি কিনলে? তুমি তো
চাইলে আরো ১৪০০ টাকা সেইভ করতে
পারতে!
.
মেয়েঃ বাবা আমি ৫০,০০০টাকা
দিয়ে মোবাইল কিনতে পারলাম, আর
এর সুরক্ষার জন্য ১৪০০ টাকা খরচ করতে
পারব না? আর এই কাভারের কারণে
ফোনটা আরো সুন্দর দেখাচ্ছে।
.
বাবাঃ এটা কি অ্যাপল কোম্পানির
জন্যঅপমান না? তারা কি যথেষ্ট
সুরক্ষার ব্যবস্থা
করে ফোনটা তৈরি করেনি?
.
মেয়েঃ না বাবা তারা নিজেরাই
পরামর্শ দিয়েছে, যেন আমরা স্ক্রিন
প্রটেকটর এবং
কাভার ব্যবহার করি এর সুরক্ষার জন্য।
আর ফোনটার কোনো ক্ষতি হোক
তা আমি চাই না।
.
বাবাঃ এটার কারণে কি ফোনটার
সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে না?
.
মেয়েঃ না বাবা সৌন্দর্য আরো
বাড়িয়ে দিচ্ছে।
-এরপর বাবা তার মেয়ের দিকে
তাকালেন এবং ভালোবাসা মাখা
একটা হাসি দিয়ে বললেন,
আমার মেয়ে তুমি জানো আমি
তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি
ফোনটা কিনতে ৫০,০০০ টাকা খরচ
করলে এবং আরো ১৪০০ টাকা খরচ
করলে এর সুরক্ষার জন্য খুব ভালো।
কিন্তু যিনি তোমাকে খুব সুন্দর করে
সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাকে
নির্দেশও দিয়েছেন তোমার সুরক্ষার
জন্য যেন কাভার তথা হিজাব
পরিধান কর, তাহলে তোমার কি সেই
সৃষ্টিকর্তার কথা শোনা উচিত না?
ফোনটার সুরক্ষার জন্য তুমি কী করলে
তার জন্য তোমাকে আখিরাতে প্রশ্ন
করা হবে না, কিন্তু হিজাবের জন্য
আমাকে এবং তোমাকে অবশ্যই
জিজ্ঞেস করা হবে।
কিনলো। শুধু তাই না, সাথে একটি
স্ক্রিন প্রটেকটর এবং সুন্দর একটা কাভারও
কিনলো। সে তার বাবাকে ফোনটা
দেখালো, এরপর তাদের মধ্যে কী কথোপকথন হল
পড়ুনঃ
বাবাঃ খুব সুন্দর মোবাইল এটি। কত
দিয়ে কিনলে?
মেয়েঃ এই তো ৫০,০০০ টাকা দিয়ে
ফোন, ১২০০ টাকা দিয়ে কাভার আর
২০০ টাকা দিয়ে স্ক্রিন প্রটেকটর।
.
বাবাঃ আচ্ছা তুমি কেন কাভার এবং
স্ক্রিন প্রটেকটরটি কিনলে? তুমি তো
চাইলে আরো ১৪০০ টাকা সেইভ করতে
পারতে!
.
মেয়েঃ বাবা আমি ৫০,০০০টাকা
দিয়ে মোবাইল কিনতে পারলাম, আর
এর সুরক্ষার জন্য ১৪০০ টাকা খরচ করতে
পারব না? আর এই কাভারের কারণে
ফোনটা আরো সুন্দর দেখাচ্ছে।
.
বাবাঃ এটা কি অ্যাপল কোম্পানির
জন্যঅপমান না? তারা কি যথেষ্ট
সুরক্ষার ব্যবস্থা
করে ফোনটা তৈরি করেনি?
.
মেয়েঃ না বাবা তারা নিজেরাই
পরামর্শ দিয়েছে, যেন আমরা স্ক্রিন
প্রটেকটর এবং
কাভার ব্যবহার করি এর সুরক্ষার জন্য।
আর ফোনটার কোনো ক্ষতি হোক
তা আমি চাই না।
.
বাবাঃ এটার কারণে কি ফোনটার
সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে না?
.
মেয়েঃ না বাবা সৌন্দর্য আরো
বাড়িয়ে দিচ্ছে।
-এরপর বাবা তার মেয়ের দিকে
তাকালেন এবং ভালোবাসা মাখা
একটা হাসি দিয়ে বললেন,
আমার মেয়ে তুমি জানো আমি
তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি
ফোনটা কিনতে ৫০,০০০ টাকা খরচ
করলে এবং আরো ১৪০০ টাকা খরচ
করলে এর সুরক্ষার জন্য খুব ভালো।
কিন্তু যিনি তোমাকে খুব সুন্দর করে
সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাকে
নির্দেশও দিয়েছেন তোমার সুরক্ষার
জন্য যেন কাভার তথা হিজাব
পরিধান কর, তাহলে তোমার কি সেই
সৃষ্টিকর্তার কথা শোনা উচিত না?
ফোনটার সুরক্ষার জন্য তুমি কী করলে
তার জন্য তোমাকে আখিরাতে প্রশ্ন
করা হবে না, কিন্তু হিজাবের জন্য
আমাকে এবং তোমাকে অবশ্যই
জিজ্ঞেস করা হবে।
শিশুর নৈতিকতা গঠনে পারিবারিক শিক্ষা ও পর্দা অনুশীলনের গুরুত্ব
আমাদের মা-বাবা, ভাই-বোন কে নিয়ে পরিবার গড়ে উঠে। একজন শিশু সন্তান জন্মের
পর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের পূর্বে ৪-৫ বছর পরিবারে বেড়ে ওঠে। এ
সময়টিতে তার মানসিক বিকাশ ও নৈতিক চরিত্র গঠন হয়ে থাকে। শিশুর মায়ের কোল
তার শিক্ষার হাতে খড়ি। ফলে পরিবার থেকেই শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভ
করে।পরিবার মানব সন্তানের প্রথম শিক্ষা নিকেতন। ছেলে-মেয়েদের জীবনে
পারিবারিক শিক্ষার মূল্য অনেক। সন্তানের মূল্যবোধ, আখলাক, চেতনা ও বিশ্বাস
জন্ম নেয় পরিবার থেকেই। পিতা-মাতার সঠিক লালন-পালনে সন্তানরা সফল হতে পারে।
পিতা-মাতা যে আদর্শ লালন করেন তাদের সন্তানরাও তাই ধারণ করার চেষ্টা করে।
হাদীস শরীফে এসেছে,
“প্রত্যেক নবজাতক স্বভাবধর্মের (ইসলাম) ওপর জন্মগ্রহণ করে। অত:পর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজক বানান।”
অন্য হাদীসে এসেছে,“উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষাদানের চেয়ে বড় দান কোনো পিতা তার সন্তানের জন্য করতে পারেনি।”
আরবী কবি হাফেজ ইবরাহীম উত্তম জাতি গঠনে মায়ের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, মাতা হলেন জ্ঞানা লোকের প্রথম বাতি। তাকে যদি পড়তে পার, জন্ম নেবে সত্য জাতি।
অতএব, অভিভাবকদের কর্তব্য হলো শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশ সাধনে ও নৈতিক চরিত্র গঠনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন করা।
১. যত্নশীলতা, স্নেহ-মমতা, আদর-ভালোবাসা দেওয়া:
শিশুরা স্রষ্টার মহান আমানত। তারা নিষ্পাপ, অপ্রষ্ফুটিত পুষ্পকলির মতো পবিত্র। পিতা-মাতা, অভিভাবকদের কাছে কোমলতা, মমতা, আদর সোহাগ পেলে তাদের হৃদয় আনন্দে উচ্ছাসে ভরে ওঠে, যা শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। পক্ষান্তরে নিষ্ঠুরতা, অবহেলা ও সহিংসতাপূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা তাদের মধ্যে মানসিক জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ক্রমান্বয়ে তাদের মানবিক গুণাবলী আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং পাশবিক চিন্তাধারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরাই একদিন বড় হয়ে মানব সমাজের জন্য বিপজ্জনক ও ধ্বংসাত্মক উপাদানে পরিণত হয়।
সন্তানের প্রতি মাতাপিতার হৃদয়জুড়ে অফুরন্ত ভালোবাসার যে ফাল্গুধারা আছে তা একটি স্বতঃসিদ্ধ সহজাত সত্য হলেও আজকাল যান্ত্রিক সভ্যতা ও ভোগবাদী বস্তুতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা মানুষকে হৃদয় মনহীন এমন এক যন্ত্রে রূপান্তরিত করেছ যে, এক শ্রেণীর পিতা-মাতা অর্থ ও প্রাচুর্যের পাহাড় গড়তে গিয়ে সন্তানের মানসিক ভবিষ্যৎ গড়ার কথা বে-মা‘লুম ভুলে যান। যে সময় সন্তানের হৃদয় থাকে পিতা-মাতার স্নেহ মমতা ও আদর-সোহাগের প্রবল পিপাসা, তখন তারা তাকে তুলে দেন কাজের মেয়ে কিংবা বেতনভোগী কর্মচারীদের হাতে।
ফলে পিতা-মাতার সান্নিধ্য সংস্পর্শ বঞ্চিত এসব শিশু মানসিক শূন্যতায় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এই শূন্যতা ঘোচানোর জন্য সে একসময় অসৎ, ভবঘুরে বন্ধুদের সাহচর্য খুঁজে নেয়। সে জানে না যে, এরাই একদিন তাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে। এ জন্য আমরা দেখি যে, বখাটেদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছে, যারা মূলত ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। অর্থাভাব বা অন্য কিছু নয়, শুধুমাত্র পিতা-মাতার উদাসীনতাই তাদের এই অধঃপতনের কারণ।
আসলে পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা একত্রিত করলেও পিতা-মাতার ভালোবাসা আত্মত্যাগ ও উৎসর্গের কোনো বিকল্প খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্যই তো ইসলাম পারিবারিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করেছে। যেন ভূমিষ্ঠ হওয়ার অব্যবহিত পরেই শিশু এমন একটি জান্নাতী পরিমণ্ডলের আশ্রয় পায়, সেখানে সবাই তাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নেয়।
শিশু ও সন্তান-সন্ততির প্রতি দয়া-ভালোবাসা প্রদর্শনে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে কত যত্নশীল ছিলেন, তা নিম্নোক্ত হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয়। হাদীসে এসেছে,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নাতি হাসান ইবন ‘আলীকে চুমু দিচ্ছিলেন। তখন তাঁর কাছে আকরা ইবন হাবিছ আত-তাইমী নামে একজন সাহাবী উপস্থিত ছিলেন। আকরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দশটি সন্তান। আমি কোনো দিন তাদের কাউকে চুমু দেই নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে (বিস্ময়ভরে) তাকালেন। তারপর বললেন, যে ব্যক্তি দয়া প্রদর্শন করে না, সে দয়ার পাত্রও হতে পারে না।”
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের কান্না সহ্য করতে পারতেন না। প্রয়োজনে সে কারণে সালাতকেও সংক্ষিপ্ত করতেন। হাদীসে এসেছে,
“আমি সালাতকে দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত পড়তে দাঁড়াই। তারপর শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পাই এবং তা তার মাকে বিচলিত করতে পারে এ আশংকায় আমি সালাত সংক্ষিপ্ত করি।”
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পুত্র ইবরাহীম-এর কাছে গেলেন। তিনি তখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’চোখে অশ্রু ঝরতে থাকে। আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনিও (কাঁদছেন)! তিনি বললেন, হে আওফের পুত্র! এটা হচ্ছে মায়া-মমতা। এরপর তাঁর চোখ থেকে আবারও অশ্রু ঝরতে লাগল। তারপর তিনি বললেন, হে চোখ অশ্রু ঝরাও, হৃদয় শোকার্ত হও, তবে আমরা আমাদের মুখে এমন কথাই বলব, যাতে আমাদের রব সন্তুষ্ট হন। হে ইবরাহীম তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।”
২. শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ:
বয়োঃপ্রাপ্ত হওয়ার পরে ইসলামের দৃষ্টিতে মানবসন্তানের ওপর বহুমুখী দায়িত্ব অর্পিত হয়, যাকে শরী‘আতের পরিভাষায় বলা হয় তাকলীফ। তাকলীফ পর্যায়ে উপনীত হয়ে যেন সে যথাযথ আপন কর্তব্য পালন করতে পারে, এজন্য শিশুর মধ্যে যখন থেকেই ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের বোধোদয় সূচিত হবে, জ্ঞান প্রথম আলোর উন্মেষ ঘটতে শুরু করবে, তখন থেকেই শুরু হবে তার শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ।
ক. ঈমানের বিষয়সমূহ শিক্ষা:
আল্লাহ তা‘আলা, ফিরিশতা, নবী-রাসূল, তাকদীর, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম, হিসাব-নিকাশ ও অন্যান্য অপরিহার্য অদৃশ্য বিষয়সংক্রান্ত বিশ্বাস। হাদীসে রয়েছে,
“তোমাদের সন্তানদের প্রথম কথা শিক্ষা দাও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”
খ. আরকানুল ইসলাম:
তথা সালাত, সাওম ইত্যাদির প্রশিক্ষণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“সাত বছরে পর্দাপণ করলেই তোমরা তোমাদের সন্তানদের সালাত পড়ার নির্দেশ দাও, দশ বছরে পর্দাপণ করলে (তখনও যদি সালাত পড়ার অভ্যাস না হয়ে থাকে তবে) তাদেরকে সালাত করার জন্য দৈহিক শাস্তি দাও এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।”
সালাত সম্পর্কিত নির্দেশ অন্যান্য আরকানের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।
গ. শরী‘আতের বিধি-বিধান:
তথা আক্বীদাহ, ইবাদাত, আখলাক, সর্বাত্মক ব্যবস্থাপনা ও বিধি-বিধান। এক কথায় ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন সম্পর্কে তাদের মধ্যে মৌলিক ধারণা রোপন করা।
ঘ. কুরআন, সুন্নাহ, সীরাত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা দান:
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে শিক্ষা দাও। (ক) তোমাদের নবীর প্রতি ভালোবাসা (খ) তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা এবং (গ) কুরআন তিলাওয়াত। কুরআনের ধারকরা নবী-রাসুল ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে আল্লাহর ‘আরশের ছায়াতলে থাকবে, যখন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না।”
একদা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর কাছে এসে জনৈক ব্যক্তি নিজের সন্তানের অবাধ্যাচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। ওমর অভিযুক্ত সন্তানকে পিতার সাথে অসদাচরণের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। সন্তান তখন বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, সন্তানের কি পিতার উপর কোনো হক আছে? উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। সে বলল, তাহলে তা কী? উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, পিতা তার জন্য সৎ আদর্শ নারীকে মাতা হিসেবে গ্রহণ করবে, তার জন্য একটা সুন্দর নাম রাখবে এবং তাকে কুরআন শিক্ষা দেবে। তখন সন্তান বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, আমার পিতা ওগুলোতে একটিও করে নি। আমার মা হচ্ছেন ক্রীতদাসী। এক সময় মূর্তিপূজারী ছিলেন, আমার নাম রেখেছে জু‘লান (অর্থাৎ গোবরে পোকা) আর আমার বাবা আমাকে কুরআনের একটি বর্ণও শিক্ষা দেন নি। উমার তখন পিতার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এসেছ সন্তানের অসদাচরণের বিরুদ্ধে নালিশ করতে। আরে তুমি তো তার প্রতি আগেই অবিচার ও অসদাচরণ করেছ।
সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের রাসূলের যুদ্ধের ইতিহাস শিক্ষা দিতাম, যেমনিভাবে তাদেরকে আমরা কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতাম।
ইমাম গাযালী রহ. তাঁর ইহইয়াউ উলুমিদ্দীনের মধ্যে শিশুকে কুরআনুল কারীম, হাদীস শরীফ, পূণ্যবানদের জীবনকথা ও তারপর দীনের বিধি-বিধান শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন।
ঙ. তাকওয়া ও আল্লাহভীতির চেতনা সঞ্চার করা:
সন্তানের মধ্যে আল্লাহর ভয় প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে। সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই বলতে হবে তুমি যা কর এবং বল প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে, দিনের আলোতে কিংবা রাতের অন্ধকারে, জলে কিংবা স্থলে সকল জায়গায়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে পর্যবেক্ষণ করেন। অতএব, আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো অপরাধ করলেও আল্লাহ তোমার কৃতকর্মের হিসাব অবশ্যই নেবেন। তোমাকে তাই সব সময় আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহর পথে চলতে হবে। সন্তানের মধ্যে খোদাভীতির এই চেতনা সঞ্চারিত করতে পারলে সে আর কুপথে পা বাড়াবে না।
চ. চারিত্রিক প্রশিক্ষণ:
চারিত্রিক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষাদানের চেয়ে বড় দান কোনো পিতা তার সন্তানের জন্য করতে পারে নি।”
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের ভালোবাসা দাও এবং তাদেরকে সর্বোত্তম শিষ্টাচারিতা ও নৈতিকতা শিক্ষা দাও।”
“পিতার ওপর সন্তানের হক হলো, তার জন্য সুন্দর একটা নাম রাখবে এবং তাকে সর্বোত্তম শিক্ষা ও চরিত্রগুণে গড়ে তুলবে।”
“সন্তানকে একটা উত্তম শিষ্টাচারিতা শিক্ষা দেওয়া আল্লাহর পথে এক সা‘ পরিমাণ বস্তু সদকা করার চেয়েও উত্তম।”
৩. সদুপদেশ প্রদান:
মাতাপিতার সদুপদেশ সন্তানের জীবনপথের পাথেয় ও অন্ধকারে আলোকরশ্মি। তা নিষ্পাপ শিশুর উর্বর হৃদয়ে তা অঙ্কিত হয়ে থাকে সারাজীবন। জীবনের গতিপথ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এগুলোই তাকে দেয় সঠিক নির্দেশনা।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“আমি একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে আরোহণ করেছিলাম। তিনি বললেন, হে বালক, আমি তোমাকে কিছু (মুল্যবান) কথা শিক্ষা দেব:* তুমি আল্লাহ তা‘আলার হক আদায়ের ব্যাপারে যত্নশীল হও, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের অনিষ্ট থেকে হিফাযত করবেন।
* যখন কিছু প্রার্থনা করবে, আল্লাহর কাছেই করবে।
* যখন সাহায্যের আবেদন করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই করবে।
* জেনে রাখ, যদি গোটা জাতি তোমার কোনো উপকার করতে চায়, তাহলে তারা ততটুকুই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য বরাদ্দ করেছেন। আর তারা যদি তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায়, তাহলে ততটুকুই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার নামে বরাদ্দ করেছেন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে আর নিবন্ধন বই শুকিয়ে গেছে অর্থাৎ তাকদীরে যা বরাদ্দ হবার তা হয়ে গেছে।[16]
“যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলল, হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়। আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধছাড়ানো দু’বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করব। হে বৎস, কোনো বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তত গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ গোপনভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন। হে বৎস, সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজে থেকে নিষেধ করো এবং বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ। অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করে না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।” [সূরা লোকমান, আয়াত: ১৩-১৯]
৪. সন্তানের কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করা:
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করেছিলেন,
﴿رَبِّ ٱجۡعَلۡنِي مُقِيمَ ٱلصَّلَوٰةِ وَمِن ذُرِّيَّتِيۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلۡ دُعَآءِ ٤٠﴾ [ابراهيم: ٤٠]
“হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সালাত কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমার পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দো‘আ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪০]
ইসলামের এ সুমহান নির্দেশনাবলীর আলোকে যারা প্রতিপালিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবে, তারাই হবে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তারা কখনোই কাউকে উত্ত্যক্ত করতে পারে না। পিতা-মাতাগণ যদি তাঁদের সন্তানদেরকে নৈতিকতার অনুশীলন বাড়িতেই নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে অনাচারমুক্ত সভ্য সমাজ গঠন অসম্ভব হবে না।
৫. রাস্তার হক আদায় করা:
ইসলাম মানুষকে সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে রাস্তাঘাটে বসতে নিষেধ করেছেন। একান্ত বসতে হলে রাস্তার হক আদায় করতে হবে। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
“সাবধান, তোমরা রাস্তায় বসবে না। তখন সাহাবীগণ বললেন, আমাদের এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা রাস্তায় বসে পরস্পর দীনী আলোচনা করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমরা একান্তই রাস্তায় বসতে চাও তাহলে রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবীগণ বললেন, রাস্তার হকসমূহ কী? আল্লাহর রাসূল বললেন, ১. চক্ষু অবনমিত করে রাখা ২. কাউকে কষ্ট না দেওয়া ৩. সালামের উত্তর দেওয়া ৪. সৎ কাজের আদেশ করা এবং ৫. মন্দ কাজে নিষেধ করা।”
আমরা যদি আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে রাস্তায় চলাফেরার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনাকে অনুসরণের তাগাদা দিতে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই রাস্তাঘাটের অনাকাঙ্খিত ঘটনা থেকে আমাদের সন্তানরা নিরাপদ থাকতে পারবে।
৬. আল্লাহভীতি:
যার মধ্যে তাকওয়া কাজ করে তিনি কখনো খারাপ কাজ করতে পারেন না। একজন মুত্তাকী মানুষ তার সকল কাজে আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করেন। তিনি জানেন, তাকে দেখছেন, শুনছেন, পর্যবেক্ষণ করছেন। আল্লাহর কাছে বান্দার গোপনীয়তা বলতে কিছুই থাকে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যা কিছু আকাশসমূহে এবং যা কিছু জমিনে আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দিবেন।” [সূরা আল-বাকারা: ২৮৪]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না; কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে তাকান।”
৭. আখিরাতের বিশ্বাস:
পরকালীন দিবসের ওপর বিশ্বাস মানুষকে পাপকর্ম থেকে বিরত রাখে। একজন মুমিন ব্যক্তি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, এ দুনিয়া অস্থায়ী, পরকালীন জীবন স্থায়ী। সেখানে দুনিয়ার সকল কর্মের হিসাব নেওয়া হবে। কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। যিদি উত্তম কর্ম করেছেন, তিনি উত্তম প্রতিদান পাবেন আর যিনি অন্যায় কর্ম করেছেন তিনি কঠিন শাস্তি ভোগ করবেন। এ বিশ্বাসই তাকে ভালো কাজে প্রেরণা যোগায় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন,
“অত:পর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। [সূরা আয-যিলযাল, আয়াত: ৭-৮]
“প্রত্যেক নবজাতক স্বভাবধর্মের (ইসলাম) ওপর জন্মগ্রহণ করে। অত:পর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজক বানান।”
অন্য হাদীসে এসেছে,“উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষাদানের চেয়ে বড় দান কোনো পিতা তার সন্তানের জন্য করতে পারেনি।”
আরবী কবি হাফেজ ইবরাহীম উত্তম জাতি গঠনে মায়ের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, মাতা হলেন জ্ঞানা লোকের প্রথম বাতি। তাকে যদি পড়তে পার, জন্ম নেবে সত্য জাতি।
অতএব, অভিভাবকদের কর্তব্য হলো শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশ সাধনে ও নৈতিক চরিত্র গঠনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন করা।
১. যত্নশীলতা, স্নেহ-মমতা, আদর-ভালোবাসা দেওয়া:
শিশুরা স্রষ্টার মহান আমানত। তারা নিষ্পাপ, অপ্রষ্ফুটিত পুষ্পকলির মতো পবিত্র। পিতা-মাতা, অভিভাবকদের কাছে কোমলতা, মমতা, আদর সোহাগ পেলে তাদের হৃদয় আনন্দে উচ্ছাসে ভরে ওঠে, যা শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। পক্ষান্তরে নিষ্ঠুরতা, অবহেলা ও সহিংসতাপূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা তাদের মধ্যে মানসিক জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ক্রমান্বয়ে তাদের মানবিক গুণাবলী আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং পাশবিক চিন্তাধারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরাই একদিন বড় হয়ে মানব সমাজের জন্য বিপজ্জনক ও ধ্বংসাত্মক উপাদানে পরিণত হয়।
সন্তানের প্রতি মাতাপিতার হৃদয়জুড়ে অফুরন্ত ভালোবাসার যে ফাল্গুধারা আছে তা একটি স্বতঃসিদ্ধ সহজাত সত্য হলেও আজকাল যান্ত্রিক সভ্যতা ও ভোগবাদী বস্তুতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা মানুষকে হৃদয় মনহীন এমন এক যন্ত্রে রূপান্তরিত করেছ যে, এক শ্রেণীর পিতা-মাতা অর্থ ও প্রাচুর্যের পাহাড় গড়তে গিয়ে সন্তানের মানসিক ভবিষ্যৎ গড়ার কথা বে-মা‘লুম ভুলে যান। যে সময় সন্তানের হৃদয় থাকে পিতা-মাতার স্নেহ মমতা ও আদর-সোহাগের প্রবল পিপাসা, তখন তারা তাকে তুলে দেন কাজের মেয়ে কিংবা বেতনভোগী কর্মচারীদের হাতে।
ফলে পিতা-মাতার সান্নিধ্য সংস্পর্শ বঞ্চিত এসব শিশু মানসিক শূন্যতায় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এই শূন্যতা ঘোচানোর জন্য সে একসময় অসৎ, ভবঘুরে বন্ধুদের সাহচর্য খুঁজে নেয়। সে জানে না যে, এরাই একদিন তাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে। এ জন্য আমরা দেখি যে, বখাটেদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছে, যারা মূলত ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। অর্থাভাব বা অন্য কিছু নয়, শুধুমাত্র পিতা-মাতার উদাসীনতাই তাদের এই অধঃপতনের কারণ।
আসলে পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা একত্রিত করলেও পিতা-মাতার ভালোবাসা আত্মত্যাগ ও উৎসর্গের কোনো বিকল্প খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্যই তো ইসলাম পারিবারিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করেছে। যেন ভূমিষ্ঠ হওয়ার অব্যবহিত পরেই শিশু এমন একটি জান্নাতী পরিমণ্ডলের আশ্রয় পায়, সেখানে সবাই তাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নেয়।
শিশু ও সন্তান-সন্ততির প্রতি দয়া-ভালোবাসা প্রদর্শনে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে কত যত্নশীল ছিলেন, তা নিম্নোক্ত হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয়। হাদীসে এসেছে,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নাতি হাসান ইবন ‘আলীকে চুমু দিচ্ছিলেন। তখন তাঁর কাছে আকরা ইবন হাবিছ আত-তাইমী নামে একজন সাহাবী উপস্থিত ছিলেন। আকরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দশটি সন্তান। আমি কোনো দিন তাদের কাউকে চুমু দেই নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে (বিস্ময়ভরে) তাকালেন। তারপর বললেন, যে ব্যক্তি দয়া প্রদর্শন করে না, সে দয়ার পাত্রও হতে পারে না।”
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের কান্না সহ্য করতে পারতেন না। প্রয়োজনে সে কারণে সালাতকেও সংক্ষিপ্ত করতেন। হাদীসে এসেছে,
“আমি সালাতকে দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত পড়তে দাঁড়াই। তারপর শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পাই এবং তা তার মাকে বিচলিত করতে পারে এ আশংকায় আমি সালাত সংক্ষিপ্ত করি।”
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পুত্র ইবরাহীম-এর কাছে গেলেন। তিনি তখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’চোখে অশ্রু ঝরতে থাকে। আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনিও (কাঁদছেন)! তিনি বললেন, হে আওফের পুত্র! এটা হচ্ছে মায়া-মমতা। এরপর তাঁর চোখ থেকে আবারও অশ্রু ঝরতে লাগল। তারপর তিনি বললেন, হে চোখ অশ্রু ঝরাও, হৃদয় শোকার্ত হও, তবে আমরা আমাদের মুখে এমন কথাই বলব, যাতে আমাদের রব সন্তুষ্ট হন। হে ইবরাহীম তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।”
২. শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ:
বয়োঃপ্রাপ্ত হওয়ার পরে ইসলামের দৃষ্টিতে মানবসন্তানের ওপর বহুমুখী দায়িত্ব অর্পিত হয়, যাকে শরী‘আতের পরিভাষায় বলা হয় তাকলীফ। তাকলীফ পর্যায়ে উপনীত হয়ে যেন সে যথাযথ আপন কর্তব্য পালন করতে পারে, এজন্য শিশুর মধ্যে যখন থেকেই ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের বোধোদয় সূচিত হবে, জ্ঞান প্রথম আলোর উন্মেষ ঘটতে শুরু করবে, তখন থেকেই শুরু হবে তার শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ।
ক. ঈমানের বিষয়সমূহ শিক্ষা:
আল্লাহ তা‘আলা, ফিরিশতা, নবী-রাসূল, তাকদীর, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম, হিসাব-নিকাশ ও অন্যান্য অপরিহার্য অদৃশ্য বিষয়সংক্রান্ত বিশ্বাস। হাদীসে রয়েছে,
“তোমাদের সন্তানদের প্রথম কথা শিক্ষা দাও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”
খ. আরকানুল ইসলাম:
তথা সালাত, সাওম ইত্যাদির প্রশিক্ষণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“সাত বছরে পর্দাপণ করলেই তোমরা তোমাদের সন্তানদের সালাত পড়ার নির্দেশ দাও, দশ বছরে পর্দাপণ করলে (তখনও যদি সালাত পড়ার অভ্যাস না হয়ে থাকে তবে) তাদেরকে সালাত করার জন্য দৈহিক শাস্তি দাও এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।”
সালাত সম্পর্কিত নির্দেশ অন্যান্য আরকানের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।
গ. শরী‘আতের বিধি-বিধান:
তথা আক্বীদাহ, ইবাদাত, আখলাক, সর্বাত্মক ব্যবস্থাপনা ও বিধি-বিধান। এক কথায় ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন সম্পর্কে তাদের মধ্যে মৌলিক ধারণা রোপন করা।
ঘ. কুরআন, সুন্নাহ, সীরাত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা দান:
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে শিক্ষা দাও। (ক) তোমাদের নবীর প্রতি ভালোবাসা (খ) তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা এবং (গ) কুরআন তিলাওয়াত। কুরআনের ধারকরা নবী-রাসুল ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে আল্লাহর ‘আরশের ছায়াতলে থাকবে, যখন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না।”
একদা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর কাছে এসে জনৈক ব্যক্তি নিজের সন্তানের অবাধ্যাচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। ওমর অভিযুক্ত সন্তানকে পিতার সাথে অসদাচরণের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। সন্তান তখন বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, সন্তানের কি পিতার উপর কোনো হক আছে? উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। সে বলল, তাহলে তা কী? উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, পিতা তার জন্য সৎ আদর্শ নারীকে মাতা হিসেবে গ্রহণ করবে, তার জন্য একটা সুন্দর নাম রাখবে এবং তাকে কুরআন শিক্ষা দেবে। তখন সন্তান বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, আমার পিতা ওগুলোতে একটিও করে নি। আমার মা হচ্ছেন ক্রীতদাসী। এক সময় মূর্তিপূজারী ছিলেন, আমার নাম রেখেছে জু‘লান (অর্থাৎ গোবরে পোকা) আর আমার বাবা আমাকে কুরআনের একটি বর্ণও শিক্ষা দেন নি। উমার তখন পিতার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এসেছ সন্তানের অসদাচরণের বিরুদ্ধে নালিশ করতে। আরে তুমি তো তার প্রতি আগেই অবিচার ও অসদাচরণ করেছ।
সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের রাসূলের যুদ্ধের ইতিহাস শিক্ষা দিতাম, যেমনিভাবে তাদেরকে আমরা কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতাম।
ইমাম গাযালী রহ. তাঁর ইহইয়াউ উলুমিদ্দীনের মধ্যে শিশুকে কুরআনুল কারীম, হাদীস শরীফ, পূণ্যবানদের জীবনকথা ও তারপর দীনের বিধি-বিধান শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন।
ঙ. তাকওয়া ও আল্লাহভীতির চেতনা সঞ্চার করা:
সন্তানের মধ্যে আল্লাহর ভয় প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে। সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই বলতে হবে তুমি যা কর এবং বল প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে, দিনের আলোতে কিংবা রাতের অন্ধকারে, জলে কিংবা স্থলে সকল জায়গায়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে পর্যবেক্ষণ করেন। অতএব, আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো অপরাধ করলেও আল্লাহ তোমার কৃতকর্মের হিসাব অবশ্যই নেবেন। তোমাকে তাই সব সময় আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহর পথে চলতে হবে। সন্তানের মধ্যে খোদাভীতির এই চেতনা সঞ্চারিত করতে পারলে সে আর কুপথে পা বাড়াবে না।
চ. চারিত্রিক প্রশিক্ষণ:
চারিত্রিক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষাদানের চেয়ে বড় দান কোনো পিতা তার সন্তানের জন্য করতে পারে নি।”
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের ভালোবাসা দাও এবং তাদেরকে সর্বোত্তম শিষ্টাচারিতা ও নৈতিকতা শিক্ষা দাও।”
“পিতার ওপর সন্তানের হক হলো, তার জন্য সুন্দর একটা নাম রাখবে এবং তাকে সর্বোত্তম শিক্ষা ও চরিত্রগুণে গড়ে তুলবে।”
“সন্তানকে একটা উত্তম শিষ্টাচারিতা শিক্ষা দেওয়া আল্লাহর পথে এক সা‘ পরিমাণ বস্তু সদকা করার চেয়েও উত্তম।”
৩. সদুপদেশ প্রদান:
মাতাপিতার সদুপদেশ সন্তানের জীবনপথের পাথেয় ও অন্ধকারে আলোকরশ্মি। তা নিষ্পাপ শিশুর উর্বর হৃদয়ে তা অঙ্কিত হয়ে থাকে সারাজীবন। জীবনের গতিপথ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এগুলোই তাকে দেয় সঠিক নির্দেশনা।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“আমি একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে আরোহণ করেছিলাম। তিনি বললেন, হে বালক, আমি তোমাকে কিছু (মুল্যবান) কথা শিক্ষা দেব:* তুমি আল্লাহ তা‘আলার হক আদায়ের ব্যাপারে যত্নশীল হও, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের অনিষ্ট থেকে হিফাযত করবেন।
* যখন কিছু প্রার্থনা করবে, আল্লাহর কাছেই করবে।
* যখন সাহায্যের আবেদন করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই করবে।
* জেনে রাখ, যদি গোটা জাতি তোমার কোনো উপকার করতে চায়, তাহলে তারা ততটুকুই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য বরাদ্দ করেছেন। আর তারা যদি তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায়, তাহলে ততটুকুই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার নামে বরাদ্দ করেছেন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে আর নিবন্ধন বই শুকিয়ে গেছে অর্থাৎ তাকদীরে যা বরাদ্দ হবার তা হয়ে গেছে।[16]
“যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলল, হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়। আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধছাড়ানো দু’বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করব। হে বৎস, কোনো বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তত গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ গোপনভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন। হে বৎস, সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজে থেকে নিষেধ করো এবং বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ। অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করে না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।” [সূরা লোকমান, আয়াত: ১৩-১৯]
৪. সন্তানের কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করা:
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করেছিলেন,
﴿رَبِّ ٱجۡعَلۡنِي مُقِيمَ ٱلصَّلَوٰةِ وَمِن ذُرِّيَّتِيۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلۡ دُعَآءِ ٤٠﴾ [ابراهيم: ٤٠]
“হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সালাত কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমার পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দো‘আ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪০]
ইসলামের এ সুমহান নির্দেশনাবলীর আলোকে যারা প্রতিপালিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবে, তারাই হবে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তারা কখনোই কাউকে উত্ত্যক্ত করতে পারে না। পিতা-মাতাগণ যদি তাঁদের সন্তানদেরকে নৈতিকতার অনুশীলন বাড়িতেই নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে অনাচারমুক্ত সভ্য সমাজ গঠন অসম্ভব হবে না।
৫. রাস্তার হক আদায় করা:
ইসলাম মানুষকে সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে রাস্তাঘাটে বসতে নিষেধ করেছেন। একান্ত বসতে হলে রাস্তার হক আদায় করতে হবে। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
“সাবধান, তোমরা রাস্তায় বসবে না। তখন সাহাবীগণ বললেন, আমাদের এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা রাস্তায় বসে পরস্পর দীনী আলোচনা করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমরা একান্তই রাস্তায় বসতে চাও তাহলে রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবীগণ বললেন, রাস্তার হকসমূহ কী? আল্লাহর রাসূল বললেন, ১. চক্ষু অবনমিত করে রাখা ২. কাউকে কষ্ট না দেওয়া ৩. সালামের উত্তর দেওয়া ৪. সৎ কাজের আদেশ করা এবং ৫. মন্দ কাজে নিষেধ করা।”
আমরা যদি আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে রাস্তায় চলাফেরার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনাকে অনুসরণের তাগাদা দিতে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই রাস্তাঘাটের অনাকাঙ্খিত ঘটনা থেকে আমাদের সন্তানরা নিরাপদ থাকতে পারবে।
৬. আল্লাহভীতি:
যার মধ্যে তাকওয়া কাজ করে তিনি কখনো খারাপ কাজ করতে পারেন না। একজন মুত্তাকী মানুষ তার সকল কাজে আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করেন। তিনি জানেন, তাকে দেখছেন, শুনছেন, পর্যবেক্ষণ করছেন। আল্লাহর কাছে বান্দার গোপনীয়তা বলতে কিছুই থাকে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যা কিছু আকাশসমূহে এবং যা কিছু জমিনে আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দিবেন।” [সূরা আল-বাকারা: ২৮৪]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না; কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে তাকান।”
৭. আখিরাতের বিশ্বাস:
পরকালীন দিবসের ওপর বিশ্বাস মানুষকে পাপকর্ম থেকে বিরত রাখে। একজন মুমিন ব্যক্তি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, এ দুনিয়া অস্থায়ী, পরকালীন জীবন স্থায়ী। সেখানে দুনিয়ার সকল কর্মের হিসাব নেওয়া হবে। কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। যিদি উত্তম কর্ম করেছেন, তিনি উত্তম প্রতিদান পাবেন আর যিনি অন্যায় কর্ম করেছেন তিনি কঠিন শাস্তি ভোগ করবেন। এ বিশ্বাসই তাকে ভালো কাজে প্রেরণা যোগায় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন,
“অত:পর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। [সূরা আয-যিলযাল, আয়াত: ৭-৮]
Subscribe to:
Posts (Atom)