Saturday, 22 August 2015

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

আসছে ঈদ উল আযহা। মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত খুশির দিন। কুরবানীর এ ঈদকে আরো সার্থক করতে আসুন জেনে নিই কিছু সাধারণ তথ্য যা হয়তো অনেকেই জানেন না।

অনেকের ধারণা কুরবানী কেবলমাত্র ১০ জিলহজ্জেই করা যায়। এটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। আপনি চাইলে ১১ বা ১২ তারিখেও করতে পারবেন। কিন্তু ১০ তারিখে করাটাই সর্বোত্তম।

প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম (পুরুষ অথবা নারী), যার প্রাত্যহিক চাহিদা ও খরচ বাদে ৬১৩.৩৫ গ্রাম রূপা বা তার সমতুল্য মূল্যমানের অর্থ অথবা যেকোন প্রকার সম্পদ উদ্ধৃত থাকে তবে তার উপর কুরবানী ফরয।

পরিবারের একাধিক প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যের যদি আলাদা আলাদা ভাবে যদি উপরোক্ত উদ্ধৃত সম্পত্তি থাকে তবে প্রত্যেককেই কুরবানী করতে হবে। এটি আলাদা আলাদাভাবে দেওয়া যাবে বা সকলে একসাথেও দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে পিতা একা কুরবানীর খরচ বহন করলে তা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

অনেকে কুরবানী না করে সমপরিমাণ অর্থ গরীব অসহায়দের বা কোন চ্যারিটিতে দান করেন। এটিও সঠিক নয়। ইবাদতের নির্দিষ্ট কিছু পর্যায় রয়েছে এবং তাদের নিজস্ব গুরুত্বও বিদ্যমান। রোজা রাখার বদলে যেমন নামায আদায় করা যায় না তেমনি কুরবানীও অন্য কোন ইবাদতের দ্বারা আদায় করা যাবে না।

গরু, ছাগল, ভেড়া বা বা উটই সাধারণত কুরবানী করা হয়। একটি ভেড়া বা ছাগল একজনের কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু একটি বড় পশু যেমন- গরু, উট বা মহিষের ক্ষেত্রে, একটি পশুকে সর্বোচ্চ সাত ভাগে কুরবানী দেওয়া যাবে।


কুরবানীর পশু সুস্থ্য সবল এবং নিখুঁত হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণত যে সমস্ত ত্রুটি থাকলে একটি পশু কুরবানীর অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে তা হল-

১. অন্ধ পশু, প্রায় অন্ধ পশু বা এক চোখ হারানো পশু।

২. রুগ্ন পশু, যেটি জবাই করার স্থান পর্যন্ত নিজে হেঁটে যেতে পারে না।

৩. যার নাক, কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশি অংশ অঙ্গহানী হয়েছে।

৪. যার দাঁত নেই বা বেশিরভাগ দাঁত পড়ে গেছে।

৫. কান ছাড়া জন্মানো পশু।

৬. যার চার পায়ের একটি নেই বা একটি পা হাঁটার অযোগ্য অর্থাৎ যেটি হাঁটার সময় তিনটি পা ব্যবহার করে।

৭. রুগ্ন পশু যার অস্থিতে মজ্জা থাকার সম্ভাবনা নেই।


কুরবানীর পশু সম্পূর্ণ হালাল আয়ের অর্থে ক্রয় করতে হবে। হারাম আয়ের মাধ্যমে ক্রয়কৃত পশুর কুরবানী কবুল করা হবে না।

সুন্নত অনুযায়ী সকলেরই নিজের কুরবানীর পশু নিজেরই জবাই করা উচিৎ। সেটি না করা গেলে তার পক্ষে অন্য একজন জবাই করতে পারবেন, তবে ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। পশু কুরবানীর সময় সেখানে উপস্থিত থাকা উত্তম।

কুরবানীর পশুর মাথা ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে রাখা এবং এসময় সূরা আল আনআমের ৭৯ নং আয়াত (৬:৭৯) তিলাওয়াত করা সুন্নত।

তবে কুরবানীর সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলা। এটি না বললে ওই পশুর গোশত খাওয়া হারাম হবে। তবে কুরবানী হয়ে যাবে। যদি কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে তা বলতে ভুলে যায় সেক্ষেত্রে কুরবানী ও গোশত উভয়ই হালাল হবে।

জিলহজ্জ মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে চুল এবং নখ অকর্তিত রেখে তা কুরবানীর পর কর্তন করা মুস্তাহাব।

জবাইকৃত পশুর মাংস সকল অংশীদারদের মধ্যে অংশ অনুযায়ী সঠিকভাবে ভাগ করে দিতে হবে। কুরবানীদাতা চাইলে সমস্ত মাংস নিজে রাখতে পারে। তবে এক তৃতীয়াংশ দরিদ্রদের মাঝে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়দের মধ্যে বন্টন করা উত্তম।

পশুর শরীরের অংশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যাবে কিন্তু কোন অংশই বিক্রয় করা যাবে না। কসাইয়ের পাওনা কুরবানীর মাংসের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে না। কেউ পশুর কোন অংশ বিক্রয় করে থাকলে প্রাপ্ত টাকা অবশ্যই যাকাত নিতে উপযুক্ত কাউকে দান করতে হবে।

কুরবানীর পশুর চামড়া দিয়ে ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি করা যাবে। কিন্তু তা বিক্রয় করলে প্রাপ্ত অর্থ বঞ্চিতদের দান করতে হবে।

আরো কিছু তথ্যঃ

১. কুরবানী করার পূর্বে পশুকে প্রচুর পানি পান করানো উচিৎ। এতে পশুর চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়।

২. পশুর মাথা দেহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা অযৌক্তিক। জুগুলার ধমনীটি কাটাই যথেষ্ট।

৩. জবাই করার সময় হাতে ঘড়ি না পড়া সুবিধাজনক।

৪. ধারাল ছুরি ব্যবহার করুন। এতে কুরবানী করা সহজ হবে এবং পশুর কষ্টও কম হবে।

৫. মাংস কাটার সময় পিচ্ছিল মাংস অনেক সময় ধরতে কষ্ট হয়। এজন্য হাতে সামান্য গুঁড়া হলুদ মাখিয়ে নিন, পিচ্ছিলভাব কমে আসবে।

৬. কুরবানীর পশুর মূল্য নিয়ে অহেতুক প্রতিযোগিতায় যাবেন না। কারণ যদি আপনার উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা না হয় তবে আপনার কুরবানী কবুল হবে না। প্রদর্শন করাই যদি পশু কুরবানীর কারণ হয় তবে সে পশু জবাই করার কোন ফায়দাই থাকবে না।

৭. ত্রুটিপূর্ণ নিয়ত ইবাদত কবুল না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। যদি কুরবানীর পশুর শরীকদের মধ্যে কারো নিয়ত ত্রুটিপূর্ণ বা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা ছাড়া অন্য কিছু হয় তবে কারো কুরবানীই কবুল না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।

৭. কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে গর্ত করে তাতে পুঁতে ফেলুন। পরিবেশ দূষণ ছাড়াও এতে অপরের অসুবিধা হতে পারে।

৮. কুরবানীর পশুর প্রতিটি লোমের জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের সওয়াব প্রদান করেন। তাই কুরবানীর ব্যাপারে সর্বোচ্চ সৎ এবং আন্তরিক থাকা আমাদের কর্তব্য।

আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক ও পরিপূর্ণভাবে কুরবানী করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ঈদের মাসায়েল

ঈদুল আজহার নামাজের আগে খাবার গ্রহণ না করা সুন্নত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরে খাবার গ্রহণ না করে নামাজে যেতেন না আর ঈদুল আজহার নামাজের আগে খাবার গ্রহণ করতেন না, নামাজ থেকে ফিরে এসে খাবার গ্রহণ করতেন’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।
কোরবানি ঈদে সকালে কোনো খাবার গ্রহণ না করে কোরবানির জবাইকৃত পশুর কলিজা বা গোশত দিয়ে খাবার গ্রহণ করা মুস্তাহাব (মিশকাত)।
ঈদের দিন গোসল করা সুন্নত। হাদিস শরীফে রয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরাফার দিনে, জুমার দিনে, ঈদুল ফিতরের দিনে ও ঈদুল আজহার দিনে বিশেষভাবে গোসল করতেন (ইবনে মাজাহ)।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন : নবী কারীম স. দু ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন।(যাদুল মাআদ)
ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া উত্তম। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘ঈদের নামাজে পায়ে হেঁটে যাওয়া সুন্নত’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।
ঈদের নামাজে এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথে ফেরা সুন্নত। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের নামাজে এক পথে গমন করতেন এবং অন্য পথে প্রত্যাবর্তন করতেন’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।
মিসওয়াক করা।
সুগন্ধি ব্যবহার করা।
সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া।
ঈদের নামায ঈদগাহে পড়া
ঈদগাহে যাবার সময় তাকবীরে তাশরীক উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত।( দারে কুতনী)
ঈদুল আয্হার নামায ঈদুল ফিতর হতে অধিক সকালে পড়া।( আহকামে জিন্দেগী)
ঈদের নামায আদায়ের পর সাহিবে নিসাবের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
ঈদের নামাযের আগে ঘরে বা ঈদগাহে নফল নামাজ না পড়া।
ঈদের নামাযের পর ঈদগাহে নফল নামায না পড়া।
আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়া ও তাদের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া।
ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা : 
ক. আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ ঈদের দিন সাক্ষাত কালে একে অপরকে বলতেন تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا و مِنْكَ – আল্লাহ তায়ালা আমার ও আপনার ভাল কাজ গুলো কবুল করুন।
খ.عِيْدٌ مُبَارَكٌ – ঈদ মোবারক বলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।
গ. كُلَّ عَامٍ وَاَنْتُمْ بِخَيْرٍ – প্রতি বছরই আপনারা ভাল থাকুন।

Saturday, 15 August 2015

নিজেকে নির্দোষ মনে করোনা :

মানুষ তার সহজাত প্রকৃতিতে নিজেকে ঠিক/ ভাল/ সঠিক/ দোষমুক্ত ভাবে এবং বলে যে, আমার জানামতে আমি কোন অন্যায় করিনি। কিন্তু হযরত ইউসুফ আ: ও জুলেখার ঘটনা দ্বারা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্বয়ং আল্লাহপাক বলেছেন আর নিজেকে নির্দোষ মনে করো না; কেননা, মন তো কুকর্ম প্রবন। তবে সে ছাড়া যার প্রতি আমার রব দয়া করেন। নিঃসন্দেহে আমার রব ক্ষমাশীল, দয়ালু (আয়াত: ৫৩, ইউসুফ)
মানুষের মন তিন প্রকার:-
১। নফসে আম্মারা বা খুত/ খুত মন যাতে ভালো মন্দ/ দ্বিধা দ্বন্ধ উভয়ই বিদ্যমান। যেমন: জুলেখার মন; প্রথমেই সে হযরত ইউসুফ আ: এর ভীষণ সুন্দর মুখ দেখে আসক্ত হয়।
২। নফসে লাউওয়ামা অর্থাৎ নফসে আম্মারা খুত/ খুত মন যখন তওবা পড়ে আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে মাফ চাইতে চায়/ আল্লাহকে স্মরণ করে। যেমন: জুলেখা তার ঘরে অবস্থিত মূর্তিটিকে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিল, তখন ইউসুফ আ: বললেন, ওটাকে ঢাকছো কেন? জুলেখা বলল, আমার মূর্তির সামনে (প্রতিমার সামনে) আমি এ কাজ করতে পারব না- তখন ইউসুফ আ: সবকিছু বললেন, প্রতিমার তো চোখ নাই তাতেই এত ভয়? আর আমার আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা তিনি দেখেন- তোমার প্রতিমাকেও দেখছেন; সুতরাং আল্লাহকে কতটুকু ভয় করা উচিত? তখন জুলেখা তার ভুল কিছূটা হলেও বুঝল! এটাই নফসে লাওয়াম্মা।
৩। তৃতীয় প্রকার মন হচ্ছে নফসে মুতমায়িন্না (পূত-পবিত্র-মন)। যেমন: হযরত ইউসুফ আ: এর মন, কেননা তিনি সর্ব অবস্থায় ছিলেন দৃঢ়। তাকে আশ্রয়দাতা আযীযে মিশরের অনুপস্থিতিতে তিনি বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারেন না। এটাই একজন বিশিষ্ট নবী, হযরত ইউসুফ আ: এর চরিত্র মাধুর্য বা নফসে মুতমায়িন্না।

উপলব্ধি: মানুষের মন কুকর্ম প্রবণ- অর্থাৎ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক ভাল করেই জানেন যে, মানুষের মন খুব অল্পতেই কুকর্মের দিকে ধাবিত হতে পারে; তাই তিনি ইউসুফ জুলেখার বাস্তব প্রেম ঘটনা স্পষ্ট প্রকাশ করে এ তিন অবস্থাই জানিয়ে দিলেন যেন মানুষ সতর্ক হতে পারে।
প্রথম সমাধান: যখন নফসে আম্মারা বা মনে কোন প্রকার খুত খুতি আসে তখন থাম/ ভাব ও ক্ষমাশীল আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল হও।
দ্বিতীয় সমাধান: নফসে লাওয়াম্মা বা সংশোধনের উপায় তালাশ করতে চাইলে প্রথম উত্তর হলো তোমার ধর্মে কি বলে? যদি ধর্মে বলে সংশোধন হও তবে ব্রেক কর/ চিন্তাকর/ ধর্মীয় উপায়ে সমাধানের চেষ্টা কর/ তওবা কর।
তৃতীয় সমাধান: নফসে মুতমায়িন্না বা পূত পবিত্র নবুয়্যতী নেককার নফসের তালাশ কর। বেশী বেশী সময় তাদের সাথে, মসজিদের পরিবেশে কাটাও। দেখবে মনে আসবে এক অনাবিল শান্তি।

তাই কখনোই নিজকে নির্দোষ মনে করবে না। কারণ: মানুষের মন খুবই কুকর্ম প্রবন। যে কোন মুহুর্তে; বিশেষত: হযরত ইউসুফ আ: এর ন্যায় একাকী কামরায় সুন্দরী রমনীর আকর্ষন চিরচরিত একটি মুহুর্ত যাতে যেকোন মানুষের পদস্খলন হতে পারে। তাই বাস্তবতার নিরিখে এখন থেকে পবিত্রানের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পন্থা অবলম্বন করে দেখ সংশোধন হতে পার কিনা/ তওবা পড় আল্লাহই উদ্ধার করবেন। কারণ: আল্লাহপাক গাফুর অর্থাৎ ক্ষমাশীল এবং রাহীম অর্থাৎ দয়ালু যিনি দয়া করেন।

আমাদের শিক্ষা নিতে হবে

মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর যখন সে আবার বাবার বাড়ি আসে তখন মা খুব আগ্রহ ভরে জানতে চায় যে ঐ বাড়িতে তার কেমন লেগেছে ?
মেয়ে জবাবে বলে-
“ আমার ওখানে ভালো লাগেনা। মানুষগুলো কেমন যেন। পরিবেশটাও আমার ভালো লাগছেনা”।
মেয়ের ভেতর এক ধরনের হতাশা দেখতে পায় তার মা। দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। মেয়ের চলে যাবার সময় চলে আসে। চলে যাবার ঠিক আগের দিন মা তার মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করেন। মা হাড়িতে পানি দেন এবং তা গরম করতে থাকেন। একসময় যখন তা ফুটতে থাকে তখন মা হাড়িতে গাজর, ডিম আর কফির বিন দেন। এভাবে বিশ মিনিট পর মা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। একটি বাটিতে গাজর, ডিম এবং কফির বিন নামিয়ে রাখেন।
এবার তিনি মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
“তুমি এখান থেকে কি বুঝতে পারলে আমাকে বল” ?
মেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে-
“আমি দেখলাম তুমি গাজর, ডিম আর কফির বিন সিদ্ধ করলে মাত্র”।
মেয়ের কথা শুনে মা বললেন-
“হ্যাঁ, তুমি ঠিকই দেখেছ। তবে তুমি কি আরও কিছু লক্ষ্য করনি?”
মেয়ে বলে-
“ না- মা ”
মা বলে-
“গাজর মোটামুটি শক্ত ধরনের, ডিম খুব হালকা আর কফির বিন খুবই শক্ত। কিন্তু যখন এগুলিকে গরম পানিতে রাখা হল তখন তিনটি জিনিসের তিন রকম অবস্থা হল। গাজর খুব নরম হয়ে গেল, আর ডিম শক্ত হয়ে গেল আর কফির বিন সুন্দর ঘ্রান আর মিষ্টি স্বাদে পানিতে মিশে গেল”।
মা এবার দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যেন অনেক অতীতে চলে যেতে চাইলেন। তারপর আবার বাস্তবে ফিরে এসে মেয়ের দিকে ফিরে বললেন-
“আমি তোমাকে এখন যে কথাগুলি বলব, আমার মাও ঠিক এইভাবেই আমাকে এ কথাগুলি বলেছিল। আমি জানিনা কথাগুলি তোমার কতটুকু উপকারে আসবে, তবে আমার জীবনকে অনেক প্রভাবিত করেছিল”।
মা কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে বলতে লাগলেন-
“তুমি যদি তোমার স্বামীর বাড়িতে নিজেকে কঠিনভাবে উপস্থাপন কর, তবে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে তোমার সংঘর্ষ হবে- তোমাকে দুর্বল করে ঠিক গাজরের মতই নরম করে ফেলবে- তোমার ব্যক্তিত্বকে ভেঙে ফেলবে। যদি তুমি নিজেকে নরম-ভঙ্গুর করে উপস্থাপন কর তবে প্রতিকূল পরিবেশ তোমাকে কব্জা করে ফেলবে, আঘাতের পর আঘাত এসে তোমার হৃদয়কে একসময় কঠিন করে ফেলবে ঠিক ডিমের মত। কিন্তু তুমি যদি তোমার ভালবাসা দিয়ে নিজেকে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মিশিয়ে দিয়ে তার অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পার তবে পরিবেশ সুন্দর হয়ে উঠবে ঠিক যেমন কফির বিন গরম পানির সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে পানিকে সুস্বাদু আর চারপাশকে মিষ্টি ঘ্রানে ভরিয়ে দিয়েছে”।
পরের দিন যখন মেয়েটি তার স্বামীর বাড়িতে যাচ্ছিল তখন তার ভিতর এক আশ্চর্য শান্ত ভাব আর এক দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ পাচ্ছিল।

আমাদের চারপাশের পরিস্থিতি সবসময় অনুকুল থাকবেনা, তাই বলে নিজেকে পরিস্থিতির কাবু না করে র্ধৈয্য ,ভালবাসা, সহমর্মিতা নিয়ে পরিস্থিতিকে কাবু করতে হবে । সুখ সবসময় নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়।

ঈমান আনতে হবে ও সৎকর্ম করে যেতে হবে ॥

১। সৎকর্ম হচ্ছে- পূর্ব বা পশ্চিমে মুখ ফেরানো নয়।
২। সৎকর্ম হচ্ছে- আল্লাহতে একমাত্র বিশ্বাস (ঈমান) দিয়ে শুরু।
৩। সৎকর্ম হলো- পরকালে বিশ্বাস। বিধর্মীরা বলে, আমরা পৃথিবী থেকে মরে গেলে শেষ; পরকাল আবার কি? আর আল্লাহ বলেন হিসাব-নিকাশ, বেহেশত/ দোজখ নির্ধারণ করতে, বিচার করতেও তো পরকালের দরকার (পুনরুত্থান দরকার)।
৪। ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস- ফেরেশতারা ছিলেন, আছেন
এবং থাকবেন।
৫। তাঁর কিতাব ও নবীদের উপর বিশ্বাস। তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কোরআন একে অপরের সমর্থক।
৬। আল্লাহর মহব্বতে খরচ- অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া জান-মাল থেকে নেক পথে খরচ কর; এতে তোমাদের কোন কমতি হবে না- এটা আল্লাহর আদেশ ও গ্যারান্টি।
৭। আত্মীয়, এতীম, পথিক, ভিক্ষুক এদের হক এদেরকে বিনা কার্পণ্যে দিয়ে দিবে।
৮। সাহায্য প্রার্থী- যারা হয়ত বলতে লজ্জা পায়, তুমি বুঝে নিবে ও তাদেরকে দান করবে।
৯। দাসমুক্তির জন্য- কেননা একজন দাস বা দাসী; প্রভূর ভয়ে আল্লাহকে ডাকতে তার অসুবিধা হচ্ছে।
১০। নামাজ প্রতিষ্ঠা করলে- অর্থাৎ নিজে, নিজের পরিবার, পাড়া, মহল্লা, দেশ এবং বিশ্বে নামাজ কায়েম কর।
১১। যাকাত আদায় করলে- অর্থাৎ ২.৫ % হারে অংক কষে যাকাত দিয়ে দাও।
১২। ওয়াদা করে তা পালন কর- তুমি বান্দার সাথে ওয়াদার বরখেলাপ করলে কাল তোমার প্রভূর সাথে কৃত ওয়াদাও বরখেলাপ করবে। তাই সাবধান! তোমাদেরকে ওয়াদা পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞেসা করা হবে।
১৩। অভাব অনটনে- ধৈর্য্যধারণ করলে।

– এরাই সত্যপরায়ণ, আল্লাহভীরু এবং সফলকাম ॥

“অহংকার পতনের মূল”

-এই প্রবাদটি মোটামুটি আমাদের সকলের জানা। কিন্তু আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন এবং তাঁর রাসূল (সা) এ ব্যাপারে কি বলেছেন তা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। চলুন, জানার চেষ্টা করি কুর’আন ও হাদীস কি বলে এ ব্যাপারে!
আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) বলেছেনঃ
“যার অন্তরে অণু পরিমান অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।” এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলঃ যদি কেউ সুন্দর জামা আর সুন্দর জুতা পরিধান করতে ভালবাসে? তখন নবী করীম (সা) বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। অহংকার মানে হল সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা।” [সহীহ্‌ মুসলিম; কিতাবুল ঈমান, অধ্যায়ঃ ১, হাদীস নম্বরঃ ১৬৪]
অহংকারীর ঠিকানা হল জাহান্নাম। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
“সুতরাং,তোমরা দ্বারগুলি দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে স্থায়ী হবার জন্যে; দেখ অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।”[সূরা নাহল; ১৬:২৯]
“যখন তার নিকট আমার আয়াত সমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে এটা শুনতেই পায়নি, যেন তার কর্ণ দুটি বধির।অতএব, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও।”[সূরা লোকমান; ৩১:৭]
“যারা নিজেদের নিকট কোন দলীল না থাকলেও আল্লাহ্‌র নিদর্শন সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের আছে শুধু অহংকার, যা সফল হবার নয়। অতএব,আল্লাহ্‌র শরণাপন্ন হও; তিনিতো সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আল-মু’মিন; ৪০:৫৬]
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
“ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না। তুমিতো কখনোই পদাভরে ভূ-পৃষ্ঠকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।” [সূরা বানী ইসরাইল, ১৭:৩৭]
মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করাঃ
এই ধরনের অহংকারের অন্তর্ভুক্ত হল মানুষকে অবজ্ঞা করা, তাদের ঘৃণা করা, নিজের সম্পর্কে অতি উচ্চ মনোভাব পোষণ করা এবং অন্যদের ছোট/ নিচু মনে করা, অন্যকে ছোট প্রমানিত করার উদ্দ্যেশ্যে নিজেকে জাহির করা, বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করা ইত্যাদি। এই ধরনের মনোভাবের/অহংকারের সূচনা হয় যখন মানুষ নিজেকে অনেক বড় মনে করে, নিজের সম্পর্কে অতি উচ্চ ধারনা পোষণ করে, নিজেকে অন্য সবার চাইতে উত্তম মনে করে; আর এটাই তাকে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে ঘৃণা, অবজ্ঞা আর হাসিঠাট্টা করতে। যেটা প্রতীয়মান হয় তার কথা এবং কাজে। এই অহংকারের ব্যাপারে কুর’আন আল কারীমে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
“(অহংকারবশে) তুমি মানুষ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ্‌ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা লোকমান, ৩১:১৮]
সহীহ্‌ মুসলিমে বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) বলেছেনঃ
“একজন মুসলিমের জন্য এটা অনেক বড় একটি গুনাহের কাজ যদি সে তার অপর এক মুসলিম ভাইকে অশ্রদ্ধা/অবজ্ঞার চোখে দেখে।” [সহীহ্‌ মুসলিম; অধ্যায়ঃ ৩২, হাদীস নম্বরঃ ৬২১৯]
ধৈর্যসহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খইরন!

Thursday, 13 August 2015


আমি আবার নিষ্পাপ হতে চাই !

দৃষ্টির জানালা খুলে অপলক চেয়ে আছি অনন্ত পথের দিকে-
সামনে আর কতদূর যেতে পারবো, তা আমাকে কখনোই জানানো হয়নি,
শুধু এতটুকু জানি, আমি পেছনে কিছু সোনাঝরা দিন রেখে এসেছি-
সেই শৈশব, যেখানে কেবল স্বপ্ন আর স্বপ্ন
ভালবাসার সোনালী চাদরে যেখানে আমি আবৃত ছিলাম সারাক্ষণ।
আমাকে তখন কে ভালোবাসে নি?

তখন তো আমার আমলনামার প্রতিটি পৃষ্ঠায় ছিল অগণিত নক্ষত্রের আলো
যা প্রতিদিন ফেরদাঊসের বিমল বাতাসে দোল খেত,
জমজমের পবিত্র পানি দিয়ে ফেরেশতারা ধুয়ে দিত আমার হৃদয়
আর সোনার চামচে করে ঠোঁটে তুলে দিত কাউসারের কোমল পানীয়।
সেই নিষ্পাপ দিনগুলো আমি পেছনে রেখে এসেছি।

এখন তো আমার জন্য পথের ওপর কেউ রেশমী পালক বিছিয়ে রাখেনা
কারণ, আমি এখন আর ফুলের মত সুরভিত নই ;
আমি আমার সকল ঐশ্বর্য অকাতরে বিলীন করে দিয়েছি মহাকালের গর্ভে।
সময়ের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে-
আমি আমার অজ্ঞতার অন্ধকারকেই ভোরের মত প্রস্ফুটিত করে তুলেছি
অথচ ইতোপূর্বেই আমার কাছে সতর্ক বার্তা এসেছিল :
"সময়ের কসম! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত ।"

না, আমি আবার ফিরে যেতে চাই সে নিবিড় জলপাই বনের ছায়ায়,
যেখানে নরম বাতাস আমার চুল ছুঁয়ে যাবে,
যেখানে অবিশ্বাস আর অকৃতজ্ঞতা বলে কোন শব্দ নেই।
সেই দুধসাদা শৈশবের মত আমি আবার নিষ্পাপ হতে চাই !
কেননা, পড়ন্ত বেলায় 'হে প্রশান্ত আত্মা' বলে যদি আমাকে না ডাকা হয়,
তাহলে আমি কার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়বো ?