আসছে ঈদ উল আযহা। মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত খুশির দিন। কুরবানীর এ
ঈদকে আরো সার্থক করতে আসুন জেনে নিই কিছু সাধারণ তথ্য যা হয়তো অনেকেই
জানেন না।
অনেকের ধারণা কুরবানী কেবলমাত্র ১০ জিলহজ্জেই করা যায়। এটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। আপনি চাইলে ১১ বা ১২ তারিখেও করতে পারবেন। কিন্তু ১০ তারিখে করাটাই সর্বোত্তম।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম (পুরুষ অথবা নারী), যার প্রাত্যহিক চাহিদা ও খরচ বাদে ৬১৩.৩৫ গ্রাম রূপা বা তার সমতুল্য মূল্যমানের অর্থ অথবা যেকোন প্রকার সম্পদ উদ্ধৃত থাকে তবে তার উপর কুরবানী ফরয।
পরিবারের একাধিক প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যের যদি আলাদা আলাদা ভাবে যদি উপরোক্ত উদ্ধৃত সম্পত্তি থাকে তবে প্রত্যেককেই কুরবানী করতে হবে। এটি আলাদা আলাদাভাবে দেওয়া যাবে বা সকলে একসাথেও দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে পিতা একা কুরবানীর খরচ বহন করলে তা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
অনেকে কুরবানী না করে সমপরিমাণ অর্থ গরীব অসহায়দের বা কোন চ্যারিটিতে দান করেন। এটিও সঠিক নয়। ইবাদতের নির্দিষ্ট কিছু পর্যায় রয়েছে এবং তাদের নিজস্ব গুরুত্বও বিদ্যমান। রোজা রাখার বদলে যেমন নামায আদায় করা যায় না তেমনি কুরবানীও অন্য কোন ইবাদতের দ্বারা আদায় করা যাবে না।
গরু, ছাগল, ভেড়া বা বা উটই সাধারণত কুরবানী করা হয়। একটি ভেড়া বা ছাগল একজনের কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু একটি বড় পশু যেমন- গরু, উট বা মহিষের ক্ষেত্রে, একটি পশুকে সর্বোচ্চ সাত ভাগে কুরবানী দেওয়া যাবে।
কুরবানীর পশু সুস্থ্য সবল এবং নিখুঁত হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণত যে সমস্ত ত্রুটি থাকলে একটি পশু কুরবানীর অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে তা হল-
১. অন্ধ পশু, প্রায় অন্ধ পশু বা এক চোখ হারানো পশু।
২. রুগ্ন পশু, যেটি জবাই করার স্থান পর্যন্ত নিজে হেঁটে যেতে পারে না।
৩. যার নাক, কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশি অংশ অঙ্গহানী হয়েছে।
৪. যার দাঁত নেই বা বেশিরভাগ দাঁত পড়ে গেছে।
৫. কান ছাড়া জন্মানো পশু।
৬. যার চার পায়ের একটি নেই বা একটি পা হাঁটার অযোগ্য অর্থাৎ যেটি হাঁটার সময় তিনটি পা ব্যবহার করে।
৭. রুগ্ন পশু যার অস্থিতে মজ্জা থাকার সম্ভাবনা নেই।
কুরবানীর পশু সম্পূর্ণ হালাল আয়ের অর্থে ক্রয় করতে হবে। হারাম আয়ের মাধ্যমে ক্রয়কৃত পশুর কুরবানী কবুল করা হবে না।
সুন্নত অনুযায়ী সকলেরই নিজের কুরবানীর পশু নিজেরই জবাই করা উচিৎ। সেটি না করা গেলে তার পক্ষে অন্য একজন জবাই করতে পারবেন, তবে ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। পশু কুরবানীর সময় সেখানে উপস্থিত থাকা উত্তম।
কুরবানীর পশুর মাথা ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে রাখা এবং এসময় সূরা আল আনআমের ৭৯ নং আয়াত (৬:৭৯) তিলাওয়াত করা সুন্নত।
তবে কুরবানীর সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলা। এটি না বললে ওই পশুর গোশত খাওয়া হারাম হবে। তবে কুরবানী হয়ে যাবে। যদি কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে তা বলতে ভুলে যায় সেক্ষেত্রে কুরবানী ও গোশত উভয়ই হালাল হবে।
জিলহজ্জ মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে চুল এবং নখ অকর্তিত রেখে তা কুরবানীর পর কর্তন করা মুস্তাহাব।
জবাইকৃত পশুর মাংস সকল অংশীদারদের মধ্যে অংশ অনুযায়ী সঠিকভাবে ভাগ করে দিতে হবে। কুরবানীদাতা চাইলে সমস্ত মাংস নিজে রাখতে পারে। তবে এক তৃতীয়াংশ দরিদ্রদের মাঝে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়দের মধ্যে বন্টন করা উত্তম।
পশুর শরীরের অংশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যাবে কিন্তু কোন অংশই বিক্রয় করা যাবে না। কসাইয়ের পাওনা কুরবানীর মাংসের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে না। কেউ পশুর কোন অংশ বিক্রয় করে থাকলে প্রাপ্ত টাকা অবশ্যই যাকাত নিতে উপযুক্ত কাউকে দান করতে হবে।
কুরবানীর পশুর চামড়া দিয়ে ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি করা যাবে। কিন্তু তা বিক্রয় করলে প্রাপ্ত অর্থ বঞ্চিতদের দান করতে হবে।
আরো কিছু তথ্যঃ
১. কুরবানী করার পূর্বে পশুকে প্রচুর পানি পান করানো উচিৎ। এতে পশুর চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়।
২. পশুর মাথা দেহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা অযৌক্তিক। জুগুলার ধমনীটি কাটাই যথেষ্ট।
৩. জবাই করার সময় হাতে ঘড়ি না পড়া সুবিধাজনক।
৪. ধারাল ছুরি ব্যবহার করুন। এতে কুরবানী করা সহজ হবে এবং পশুর কষ্টও কম হবে।
৫. মাংস কাটার সময় পিচ্ছিল মাংস অনেক সময় ধরতে কষ্ট হয়। এজন্য হাতে সামান্য গুঁড়া হলুদ মাখিয়ে নিন, পিচ্ছিলভাব কমে আসবে।
৬. কুরবানীর পশুর মূল্য নিয়ে অহেতুক প্রতিযোগিতায় যাবেন না। কারণ যদি আপনার উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা না হয় তবে আপনার কুরবানী কবুল হবে না। প্রদর্শন করাই যদি পশু কুরবানীর কারণ হয় তবে সে পশু জবাই করার কোন ফায়দাই থাকবে না।
৭. ত্রুটিপূর্ণ নিয়ত ইবাদত কবুল না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। যদি কুরবানীর পশুর শরীকদের মধ্যে কারো নিয়ত ত্রুটিপূর্ণ বা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা ছাড়া অন্য কিছু হয় তবে কারো কুরবানীই কবুল না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।
৭. কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে গর্ত করে তাতে পুঁতে ফেলুন। পরিবেশ দূষণ ছাড়াও এতে অপরের অসুবিধা হতে পারে।
৮. কুরবানীর পশুর প্রতিটি লোমের জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের সওয়াব প্রদান করেন। তাই কুরবানীর ব্যাপারে সর্বোচ্চ সৎ এবং আন্তরিক থাকা আমাদের কর্তব্য।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক ও পরিপূর্ণভাবে কুরবানী করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
অনেকের ধারণা কুরবানী কেবলমাত্র ১০ জিলহজ্জেই করা যায়। এটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। আপনি চাইলে ১১ বা ১২ তারিখেও করতে পারবেন। কিন্তু ১০ তারিখে করাটাই সর্বোত্তম।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম (পুরুষ অথবা নারী), যার প্রাত্যহিক চাহিদা ও খরচ বাদে ৬১৩.৩৫ গ্রাম রূপা বা তার সমতুল্য মূল্যমানের অর্থ অথবা যেকোন প্রকার সম্পদ উদ্ধৃত থাকে তবে তার উপর কুরবানী ফরয।
পরিবারের একাধিক প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যের যদি আলাদা আলাদা ভাবে যদি উপরোক্ত উদ্ধৃত সম্পত্তি থাকে তবে প্রত্যেককেই কুরবানী করতে হবে। এটি আলাদা আলাদাভাবে দেওয়া যাবে বা সকলে একসাথেও দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে পিতা একা কুরবানীর খরচ বহন করলে তা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
অনেকে কুরবানী না করে সমপরিমাণ অর্থ গরীব অসহায়দের বা কোন চ্যারিটিতে দান করেন। এটিও সঠিক নয়। ইবাদতের নির্দিষ্ট কিছু পর্যায় রয়েছে এবং তাদের নিজস্ব গুরুত্বও বিদ্যমান। রোজা রাখার বদলে যেমন নামায আদায় করা যায় না তেমনি কুরবানীও অন্য কোন ইবাদতের দ্বারা আদায় করা যাবে না।
গরু, ছাগল, ভেড়া বা বা উটই সাধারণত কুরবানী করা হয়। একটি ভেড়া বা ছাগল একজনের কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু একটি বড় পশু যেমন- গরু, উট বা মহিষের ক্ষেত্রে, একটি পশুকে সর্বোচ্চ সাত ভাগে কুরবানী দেওয়া যাবে।
কুরবানীর পশু সুস্থ্য সবল এবং নিখুঁত হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণত যে সমস্ত ত্রুটি থাকলে একটি পশু কুরবানীর অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে তা হল-
১. অন্ধ পশু, প্রায় অন্ধ পশু বা এক চোখ হারানো পশু।
২. রুগ্ন পশু, যেটি জবাই করার স্থান পর্যন্ত নিজে হেঁটে যেতে পারে না।
৩. যার নাক, কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশি অংশ অঙ্গহানী হয়েছে।
৪. যার দাঁত নেই বা বেশিরভাগ দাঁত পড়ে গেছে।
৫. কান ছাড়া জন্মানো পশু।
৬. যার চার পায়ের একটি নেই বা একটি পা হাঁটার অযোগ্য অর্থাৎ যেটি হাঁটার সময় তিনটি পা ব্যবহার করে।
৭. রুগ্ন পশু যার অস্থিতে মজ্জা থাকার সম্ভাবনা নেই।
কুরবানীর পশু সম্পূর্ণ হালাল আয়ের অর্থে ক্রয় করতে হবে। হারাম আয়ের মাধ্যমে ক্রয়কৃত পশুর কুরবানী কবুল করা হবে না।
সুন্নত অনুযায়ী সকলেরই নিজের কুরবানীর পশু নিজেরই জবাই করা উচিৎ। সেটি না করা গেলে তার পক্ষে অন্য একজন জবাই করতে পারবেন, তবে ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। পশু কুরবানীর সময় সেখানে উপস্থিত থাকা উত্তম।
কুরবানীর পশুর মাথা ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে রাখা এবং এসময় সূরা আল আনআমের ৭৯ নং আয়াত (৬:৭৯) তিলাওয়াত করা সুন্নত।
তবে কুরবানীর সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলা। এটি না বললে ওই পশুর গোশত খাওয়া হারাম হবে। তবে কুরবানী হয়ে যাবে। যদি কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে তা বলতে ভুলে যায় সেক্ষেত্রে কুরবানী ও গোশত উভয়ই হালাল হবে।
জিলহজ্জ মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে চুল এবং নখ অকর্তিত রেখে তা কুরবানীর পর কর্তন করা মুস্তাহাব।
জবাইকৃত পশুর মাংস সকল অংশীদারদের মধ্যে অংশ অনুযায়ী সঠিকভাবে ভাগ করে দিতে হবে। কুরবানীদাতা চাইলে সমস্ত মাংস নিজে রাখতে পারে। তবে এক তৃতীয়াংশ দরিদ্রদের মাঝে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়দের মধ্যে বন্টন করা উত্তম।
পশুর শরীরের অংশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যাবে কিন্তু কোন অংশই বিক্রয় করা যাবে না। কসাইয়ের পাওনা কুরবানীর মাংসের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে না। কেউ পশুর কোন অংশ বিক্রয় করে থাকলে প্রাপ্ত টাকা অবশ্যই যাকাত নিতে উপযুক্ত কাউকে দান করতে হবে।
কুরবানীর পশুর চামড়া দিয়ে ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি করা যাবে। কিন্তু তা বিক্রয় করলে প্রাপ্ত অর্থ বঞ্চিতদের দান করতে হবে।
আরো কিছু তথ্যঃ
১. কুরবানী করার পূর্বে পশুকে প্রচুর পানি পান করানো উচিৎ। এতে পশুর চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়।
২. পশুর মাথা দেহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা অযৌক্তিক। জুগুলার ধমনীটি কাটাই যথেষ্ট।
৩. জবাই করার সময় হাতে ঘড়ি না পড়া সুবিধাজনক।
৪. ধারাল ছুরি ব্যবহার করুন। এতে কুরবানী করা সহজ হবে এবং পশুর কষ্টও কম হবে।
৫. মাংস কাটার সময় পিচ্ছিল মাংস অনেক সময় ধরতে কষ্ট হয়। এজন্য হাতে সামান্য গুঁড়া হলুদ মাখিয়ে নিন, পিচ্ছিলভাব কমে আসবে।
৬. কুরবানীর পশুর মূল্য নিয়ে অহেতুক প্রতিযোগিতায় যাবেন না। কারণ যদি আপনার উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা না হয় তবে আপনার কুরবানী কবুল হবে না। প্রদর্শন করাই যদি পশু কুরবানীর কারণ হয় তবে সে পশু জবাই করার কোন ফায়দাই থাকবে না।
৭. ত্রুটিপূর্ণ নিয়ত ইবাদত কবুল না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। যদি কুরবানীর পশুর শরীকদের মধ্যে কারো নিয়ত ত্রুটিপূর্ণ বা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা ছাড়া অন্য কিছু হয় তবে কারো কুরবানীই কবুল না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।
৭. কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে গর্ত করে তাতে পুঁতে ফেলুন। পরিবেশ দূষণ ছাড়াও এতে অপরের অসুবিধা হতে পারে।
৮. কুরবানীর পশুর প্রতিটি লোমের জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের সওয়াব প্রদান করেন। তাই কুরবানীর ব্যাপারে সর্বোচ্চ সৎ এবং আন্তরিক থাকা আমাদের কর্তব্য।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক ও পরিপূর্ণভাবে কুরবানী করার তৌফিক দান করুন। আমিন।